ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দাপুটে জয়ে বছর শেষ করল বাংলাদেশ

সর্বোচ্চ ১৫ টি-টোয়েন্টি জয়
দাপুটে জয়ে বছর শেষ করল বাংলাদেশ

টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরায় টাইগাররা। ফলে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি রুপ নেয় অঘোষিত ফাইনালে। একই সঙ্গে চলতি বছরে এটিই বাংলাদেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ম্যাচ এবং সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামে লিটন-হৃদয়রা। লাল সবুজ দলের এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বোলিংয়েই কাজ অনেকটা সেরে রেখেছিল স্বাগতিকরা। রিশাদের মায়াবি গুগলি। সাইফ উদ্দিনের দুর্বোধ্য স্লোয়ার। মোস্তাফিজুর রহমানের বাহারি কাটারের সঙ্গে শরিফুলের গতি ও মেহেদীর স্পিন, টি-টোয়েন্টিতে প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে, ঘাবড়ে দিতে আর কি চাই? গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শহিদ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য প্রাপ্তির ডালা সাজিয়ে বসেছিল। আয়ারল্যান্ড সেখানে স্রেফ অসহায়। ঢিলেঢালা ব্যাটিংয়ে গুটিয়ে গেল ১১৭ রানে।

জবাবে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৩.৪ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ৮ উইকেটের জয়ে ২-১ ব্যবধানে বাংলাদেশ নিশ্চিত করল সিরিজ জয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ের হিসেব বিবেচনায় সফলতম বছর কাটাল বাংলাদেশ। এদিন টস জিতে শুরুতে ঝড়ের পর আইরিশ ব্যাটসম্যানরা ধুঁকতে থাকে। ইনিংস শেষ হয় তাদের স্রেফ ১১৭ রানেই। আগের দুই ম্যাচে উইকেট না পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান শেষ ম্যাচে শিকার করেন তিন উইকেট। একাদশে ফেরার ম্যাচে তিন উইকেট নেন রিশাদ হোসেনও। ফিল্ডিংয়ে ৫টি ক্যাচ নিয়ে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন তানজিদ হাসান। তানজিদ পরে ব্যাট হাতেও ছিলেন দলের সেরা। অপরাজিত ফিফটি উপহার দেন বাঁহাতি ওপেনার। বাংলাদেশ জিতে যায় ৩৮ বল বাকি রেখে। আগের ম্যাচের মতোই শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে শুরু করে আয়ারল্যান্ড। সেদিন ব্যাটসম্যান ছিলেন টিম টেক্টর, এ দিন পল স্টার্লিং। তৃতীয় ওভারে নিজের বলে ক্যাচ ছেড়ে দেন এই স্টার্লিংয়েরই।

প্রথম দুই ওভারে স্টার্লিংয়ের চারটি বাউন্ডারির পর তৃতীয় ওভারে জেগে ওঠেন টিম টেক্টর। শরিফুল ইসলামকে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি আলগা বল পেয়ে। বাঁহাতি পেসার অবশ্য ফিরে আসেন প্রবলভাবে। দারুণ ডেলিভারিতে ওভারের শেষ বলে বোল্ড করে দেন টেক্টরকে (১০ বলে ১৭)। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে স্টার্লিংয়ের ছক্কা ও চারে আইরিশদের পঞ্চাশ চলে আসে পাঁচ ওভারেই। এরপরই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। মুস্তাফিজ রহমান আক্রমণে এসেই তৃতীয় বলেই দেখা পান উইকেটের। হ্যারি টেক্টর ডিফেন্স করলেও বল গড়িয়ে যায় পেছনে। তিনি চেষ্টা করেছিলেন পা দিয়ে ঠেকাতে, কিন্তু পেরে ওঠেননি। বল আলতো করে স্টাম্প ছুঁয়ে ফেলে দেয় বেলস। আগের ম্যাচের মতোই প্রথম ওভারে খরুচে শেখ মেহেদি পরে পুষিয়ে দেন। পাওয়ার-প্লে শেষে বোলিংয়ে এসেই প্রথম বলে ফেরান তিনি লর্কান টাকারকে।

এরপর দুই প্রান্তে রিশাদ ও শেখ মেহেদির আঁটসাঁট বোলিংয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি আইরিশ ব্যাটসম্যানরা। বাউন্ডারি বন্ধ হয়ে যায়। উইকেট ধরা দিতে থাকে। প্রথম ৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫০ রান তোলা দল পরের ৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৬ রান। অধিনায়ক স্টার্লিং তখনও ছিলেন দলের আশা হয়ে। তাকেও ফিরিয়ে দেন রিশাদ। দুর্দান্ত এক গুগলিতে কার্টিস ক্যাম্ফারকে (১৬ বলে ৯) বোল্ড করা লেগ স্পিনার আরেকটি গুগলিতে ফেরান স্টার্লিংকে (২৭ বলে ৩৮)। এরপর আর কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। অনেকক্ষণ এক প্রান্তে থাকা জর্জ ডকরেল শেষের আগের ওভারে আউট হন ২৩ বলে ১৯ রান করে। শেষ পাঁচ উইকেটের প্রতিটিতে ক্যাচ নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান তানজিদ। রান তাড়ায় বাংলাদেশ তানজিদের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠায় সাইফ হাসানকে। সিরিজের আগের দুই ম্যাচ রান না পাওয়া ব্যাটসম্যান এবারও আউট হয়ে যান ১৪ বলে ১৯ রান করে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের টানা ছয় ইনিংসে ২৫ রানও ছুঁতে পারলেন না তিনি। তিনে নেমে বাজে এক ডেলিভারিতে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন অধিনায়ক লিটনও। তবে দলকে কোনো চাপে পড়তে হয়নি। আইরিশদের আলগা বোলিং কাজে লাগিয়ে অনায়াসেই দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তানজিদ ও পারভেজ হোসেন ইমন। জন্মদিনের পরদিন ফিফটি করে কেক কাটার মতো করে উদযাপন করেন তানজিদ। ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৩ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত রয়ে যান পারভেজ। এই সিরিজ দিয়ে উত্থান-পতনে ভরা একটা বছর বাংলাদেশ শেষ করল এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি জেতার রেকর্ড গড়ে। ৩০ ম্যাচ খেলে এ বছর ১৫টি ম্যাচ জিতেছে তারা। এই সংস্করণে লিটনদের পরের ম্যাচ আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপে। নতুন বছর শুরু হবে বিশ্বকাপের চ্যালেঞ্জ দিয়ে। তার আগে এমন এক সহজ-সুন্দর জয় শুধু স্বস্তিই নয়, দেবে একটু বাড়তি সাহসও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত