
ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টের শেষ ছিল গতকাল শনিবার। এদিন শহিদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে ঢুকে প্রবেশপথেই দেখা মিলল কালো ব্যানারে শহিদ শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি। এরপর ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল দেশি বিদেশি খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, আম্পায়ার ও জাজদের বুকে কালোব্যাজ। চারিদিকে যেন শোকো ছায়া নেমে এসেছে। এমনকি ইতিহাস গড়ে রুপা তিলেও উচ্ছ্বাসহীন ছিলেন আল আমিন ও উর্মি আক্তার। রাষ্ট্রীয় শোক দিবসকে এভাবেই পালন করতে দেখা গেছে ব্যাডমিন্টনে।
আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনের ফাইনালে ওঠে আগেই ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন আল আমিন জুমার-ঊর্মি আক্তার জুটি। তবে ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জে স্বর্ণ জিততে পারেননি। মিশ্র দ্বৈতের ফাইনালে মালয়েশিয়ান জুটির কাছে হেরে গেছেন তারা। প্রথম সেটে লড়াই করলেও, পরের সেটে আর পেরে ওঠেননি। ২৭-২৫ ও ২১-১৪ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টে রুপা জিতেছেন তারা। রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের কারণে ফাইনালে কোনো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। ফাইনালে ওঠার কারণে অর্থ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের মিশ্র দ্বৈতের তারকা জুটি জুমার-ঊর্মি। বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি হাবিব উল্যাহ ডন দুজনকে পাঁচশত করে মার্কিন ডলার অর্থ পুরস্কার দিয়েছেন। একই সঙ্গে শাটলারদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশি কোচসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানেরও আশ্বাস দিয়েছেন হাবিব উল্যাহ ডন।
ফাইনাল শেষে আল আমিন জুমার বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা কোনো আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ফাইনালে উঠতে পেরেছি এটা যেমন আনন্দের, তেমনি চ্যাম্পিয়ন হতে না পেরে একটু তো খারাপ লাগছেই। ওরা আমাদের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা ট্রেনিংয়ে অনেক এগিয়ে। সেদিক থেকে আমরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে। একক, দ্বৈত এবং মিশ্র দ্বৈত তিন বিভাগেই আমি খেলেছি। আমি কোনো ক্লান্তি অনুভব করেনি, আনন্দ নিয়েই খেলেছি। এবার পারিনি, ভবিষ্যতে অবশ্যই দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জিতে আনব।’ স্বর্ণ জয়ের খুব কাছাকাছি এসে না পারার হতাশা ফুটে উঠল উর্মির কণ্ঠে। ‘অবশ্যই আমরা অনেক সন্তুষ্ট (রুপা পেয়ে), কারণ বাংলাদেশে এই প্রথম আমরা ইন্টারন্যাশনালে ফাইনালে উঠেছি।
আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। হয়তো চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি, কিন্তু ফাইনালে খেলেছি, এটাতেই আমরা খুশি।’ তিনি বলেন, ‘(দ্বিতীয় সেটে না পারার কারণ) ওরা আসলে দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করে, ভালো কোচের অধীনে থাকে এবং ওদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি। ওদের স্পন্সর, ট্রেনিং সব কিছুই আমাদের চেয়ে ভালো। আমরা সারা বছর ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাই না, এই গ্যাপটুকুই আমাদের পিছিয়ে রেখেছে।’ উর্মির আরও বলেন, ‘এসএ গেমসকে সামনে রেখে আমরা যে তিন মাসের অনুশীলনে ছিলাম, তা অনেক কাজে দিয়েছে। ওই কারণেই এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পেরেছি।’
এছাড়া পুরুষ এককে দুই ভারতীয়র লড়াইয়ে মেইরাবা মাইসনাম ২১-৭ ও ২১-১২ পয়েন্টে নুমাইর শাইককে, নারী এককে ভারতের তানভি রেড্ডিকে ২২-২০, ২১-২৩ ও ২১-১৫ পয়েন্টে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন যুক্তরাষ্ট্রের ইসিকা জয়সোয়াল। পুরুষ দ্বৈতের ফাইনালে ভিয়েতনামের ড্যাং খাহ-ট্রান হোং জুটিকে ২১-১৯ ও ২১-১২ পয়েন্টের ব্যবধান হারায় ভারতের নিরঞ্জন ও রুবান কুমার জুটি। সর্বশেষ নারী দ্বৈতের ফাইনালে থাইল্যান্ডের পাত্থারিন-সারিসা জানপেং জুটির কাছে মালয়েশিয়ার গ্যান মিন-তান জিং জুটিকে ২১-৭, ২০-২২ ও ২১-১৫ পয়েন্টে হারিয়ে দেয়।