ঢাকা শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিতর্ক সঙ্গে নিয়ে মাঠে গড়াল বিপিএল

বিতর্ক সঙ্গে নিয়ে মাঠে গড়াল বিপিএল

অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলার আভাস মিলেছিল আগেই। যার নমুনা দেখা গেছে আগের দিন। আয়োজনের ত্রুটি থেকে শুরু করে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতে অস্থিরতা- সব মিলিয়ে বিশৃঙ্খলা যেন এই টুর্নামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রথম বল মাঠে গড়ানোর আগেই এক গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। অধিনায়কদের নিয়ে ফটোসেশন হয়নি। ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়নি। কারণ, ট্রফিই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। টাইটেল স্পন্সরের নাম জানানো হয়নি। এই সময়ের একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে এসব কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু অকল্পনীয় নানা কিছু বাস্তব হয়ে ওঠার নামই তো বিপিএল! যে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন একটি দলের মালিকপক্ষ সরে দাঁড়ায়, অনুশীলনে অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠ ছেড়ে যান কোচ ও সহকারী কোচ, সেখানে ট্রফি উন্মোচন আর ফটোসেশন না থাকাটা তো সামান্য ব্যাপার।

এতসব বিতর্কের মধ্যেদিয়ে গতকাল শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম। এ সময় পুরো স্টেডিয়ামই ছেয়ে গেল লাল-সবুজ বেলুনে। প্রায় ২৫ হাজার বেলুন উড়ল আকাশে। এর আগে শহীদ ওসমান বিন হাদির জন্য পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। কোরআন তিলওয়াতের পর গাওয়া হয় জাতীয়সংগীত। যদিও ঢাকায় ২৪ ডিসেম্বর বড় আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কারণে তা হয়নি।

এরপর বেলা ৩ টায় রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ও সিলেট টাইনসের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয় বিপিএলে মাঠের লড়াই। প্রথম দিনে মাঝের বিরতিতে দর্শকদের জন্য গান ফুয়াদ আল মুক্তাদির। থাকছে আলোক প্রদর্শনীও। আগের সূচি অনুযায়ী প্রথম ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ২টায়। তবে ছোট পরিসরে উদ্বোধনী আয়োজনের কারণে ম্যাচের সময়ে বদল এসেছে। প্রথম ম্যাচটি শুরু দুপুর ৩টায়, পরেরটি রাত পৌনে আটটায়। উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানায় বদল এসেছে আসর শুরুর আগের দিন। এই দলটির কর্ণধারদের নিয়ে নানা প্রশ্ন ও সংশয় ছিল আগে থেকেই। শেষ মুহূর্তে আর্থিক সঙ্কটের কথা জানিয়ে তারা সরে দাঁড়ায়। ত্বরিত দলটির দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয় বিসিবি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন ঠিক করা হয় নতুন কোচ।

বিশ্বের আর কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে এমন কিছু সম্ভব?

চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা বদল নিয়ে যখন তোলপাড়, এর মধ্যেই বয়ে যায় আরেক ঝড়। দলের ভেতরের নানা অব্যবস্থাপনা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় করে মাঠ ছেড়ে চলে যান নোয়াখালী এক্সপ্রেসের কোচ খালেদ মাহমুদ ও সহকারী কোচ তালহা জোবায়ের। নানা কিছু নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে খালেদ মাহমুদ বলেন, এভাবে তিনি কাজ করতে চান না। তালহা বলেন, এবারের মতো এতটা বাজে বিপিএল তিনি আগে দেখেননি। বিপিএল এভাবেই প্রতি বছর নতুন তলানিতে পৌঁছে যাওয়ার পথ খুঁজে নেয়।

গত মৌসুমে নানা বিতর্কে জেরবার ছিল এই লিগ। এরপর অনেক আলোচনা হয়েছে, স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত এবং গোছানো আসরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেসবের প্রতিফলন পড়েনি। বরং এবার শুরুর আগেই নজিরবিহীন সব ঘটনা দেখা গেল। ছয় দল নিয়ে হচ্ছে এবারের টুর্নামেন্ট। দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। মালিকপক্ষের আর্থিক সক্ষমতা, ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগ, পেশাদার মানসিকতা, এসব দফায় দফায় যাচাইবাছাই করে কয়েকটি ধাপে পরখ করে তবেই মালিকানা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল বিসিবির পক্ষ থেকে। কিন্তু বাস্তব চিত্র তো ফুটে উঠল চট্টগ্রাম রয়্যালসের ঘটনাতেই। দলগুলো আসলে কত বছর টিকবে, সেই সন্দেহ প্রবল।

দীর্ঘদিনের ড্রাফট পদ্ধতি থেকে সরে এসে এবার নিলাম হয়েছে বিপিএলে। সেটি নিয়ে ভালো-মন্দ মিলিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। ভালোমানের বিদেশি ক্রিকেটার অবশ্য মিলেছে হাতেগোণা কয়েকজন। লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ বাতিল হওয়ায় ও পাকিস্তান বোর্ড তাদের ক্রিকেটারদের অনাপত্তিপত্র দিতে রাজি হওয়ায় কিছু ক্রিকেটার পাওয়া গেছে। তার পরও মানসম্পন্ন ক্রিকেটার খুবই কম। প্রায় অচেনা, নিজ দেশের ক্রিকেটেই খুব পরিচিত নন, এমন বিদেশি ক্রিকেটারও নেওয়া হয়েছে। দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও এমন কয়কজন ক্রিকেটারকে নেওয়া হয়েছে, যাদের ঘিরে সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ আছে প্রবলভাবেই। বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগ ও নবগঠিত ইন্টেগ্রিটি ইউনিট সঠিকভাবে কাজ করতে চাইলে তাদেরকে ব্যস্ত সময় হয়তো কাটাতে হবে।

গত আসরের পর গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখে বিসিবির ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের প্রধান অ্যালেক্স মার্শালের সুপারিশে ৯ জন ক্রিকেটারকে এবারের বিপিএলের বাইরে রাখা হয়েছে। টুর্নামেন্টকে স্বচ্ছ রাখতে দলগুলির সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের সংযুক্ত রাখা হচ্ছে। তবু নানা কিছুর চোখরাঙানি থাকছেই।

অসংখ্য নেতিবাচকতার ভিড়ে ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারে শুধু মাঠের ক্রিকেট, যদি খেলা ভালো হয় ও ম্যাচগুলো জমজমাট হয়। অনেক ভুলের ভিড়ে বিসিবি সাধুবাদ পাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশির ভাগ ম্যাচ সিলেট ও চট্টগ্রামে রেখে মিরপুরে ম্যাচ কম রাখায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সম্ভাব্য ভালো প্রস্তুতির সুযোগ তাতে থাকবে। অবশ্য বিদেশি ক্রিকেটারদের নামগুলি দেখলে টুর্নামেন্টের ক্রিকেটীয় মান নিয়েও আশার জায়গা খুব একটা থাকে না। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন নানা প্রসঙ্গে বারবার বলেছেন, ‘আমরা চাপে আছি।’ চাপে আছে আসলে দেশের ক্রিকেটই। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে, যেখানে হওয়ার কথা ক্রিকেট উৎসব, কিন্তু বাস্তবে প্রতিটি দিনে প্রতি মূহূর্তে থাকবে শঙ্কা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত