আমাদের জীবনের অনেক বড় অংশ অপচয় হয় অবসরে। বিভিন্ন পেশা ও কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষ ছুটি পেলে পুরো সময় কাটিয়ে দেয় হাসি-ঠাট্টা, ঘুরতে যাওয়া, অশ্লীল বিনোদন, অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি এবং ভোগ-বিলাসিতায়। চাইলেই এই মুক্ত সময়টুকু আনন্দের সঙ্গে কাটিয়েও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য সওয়াব বা প্রতিদান অর্জন করে নেওয়া যায়। আনন্দ বিনোদন ও পরিবারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রণোদনা ইসলাম শুধু সমর্থন নয়, বরং উৎসাহিতও করে। কিন্তু ইসলাম হচ্ছে সুশৃঙ্খল ও প্রশান্তির ধর্ম। মানুষের জীবনের আমোদণ্ডপ্রমোদ ও অন্যান্য আনন্দের বিষয়ে রয়েছে ইসলামের সুসংহত নির্দেশনা। এই নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি মানুষ তার অবসর সময় পালনের মাধ্যমে দ্বিগুণ লাভবান হতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, যখনই আপনি অবসর পাবেন সাধনা করবেন এবং আপনার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করবেন।’ (সুরা আলাম নাশরা : ৭-৮)।
দুনিয়ার কাজ থেকে অব্যাহতি পেলেই আমার ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি মনোনিবেশ করো, নিয়ত পরিষ্কার করো, পরিপূর্ণ আগ্রহ সহকারে আমার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া চাই।
অবসর অত্যন্ত ফলপ্রসূ সময়। এর সুশৃঙ্খল ও উপযুক্ত ব্যবহার জীবনের সব ক্ষেত্রে সেটার সুফল বয়ে আনে। ছাত্রছাত্রীরা এ সময়টাতে ধর্মীয় পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে। ফলে তাদের ঈমান ও আমলের দিকটি উজ্জ্বল হবে। সেই সঙ্গে তাদের প্রতি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতিফলন ঘটবে। এ ছাড়া কর্মজীবীরা বাসায় স্ত্রী-পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে ইসলামের সুন্দর ও প্রশংসনীয় বিষয় শেখানোর মাধ্যমে সময় কাটাতে পারে। নবী-রাসুলদের সুমহান আদর্শ ও তাদের ঘটনা বাসায় সবাইকে শোনাতে পারে। এতে করে তাদের হৃদয়ে ছোটবেলাতেই ঈমানের আলো প্রজ্বলিত হয়ে উঠবে। সন্তানরা বিপথে গেলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও লাঞ্ছনার শিকার হয় মা-বাবা। ছোটবেলা থেকে তাদের আদর্শবান করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবসর সময়ে তাদের প্রতি তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও ধর্মীয় বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
মহান আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে তার ইবাদতের জন্য অবসর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। আমি তোমার বক্ষ অভাবমুক্ত করে দেব এবং তোমার দরিদ্রতা দূর করে দেব। আর যদি সেটা না করো (অর্থাৎ আমার ইবাদতের জন্য অবসর না হও), তবে তোমার দুই হাত ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার অভাব-অনটনের পথ কখনো বন্ধ করব না।’ (তিরমিজি : ২৪৬৬)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য অবসর হও। তা হলে আমি তোমার অন্তর ধনী বানিয়ে দেব এবং তোমার দুই হাত রিজিক দিয়ে পূর্ণ করে দেব। হে আদম সন্তান, আমার (ইবাদত) থেকে দূরে সরে যেয়ো না। তবে আমি তোমার হৃদয় দারিদ্র্য দিয়ে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দুই হাত ব্যস্ততা দিয়ে ভরে দেব।’ (মুস্তাদরাক হাকেম : ৭৯২৬)।
জীবনে সুখ ও আনন্দের উপকরণ উপভোগ করতে ইসলাম কখনও বাধা দেয় না। তবে এই আনন্দ, উপভোগ ও বিনোদন যদি আমরা মহান আল্লাহ ও নবীজি (সা.)-এর আদর্শিক পথে পালন করি তা হলে একই সঙ্গে মনের প্রফুল্লতা ও রবের সন্তুষ্টি দুটোই অর্জন করতে পারব। পূর্ণাঙ্গ সুখ ও আনন্দের জীবন তাদেরই, যারা উভয় জগতের সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।