
উৎসবমুখর পরিবেশে জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন করেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান শেষ হয় রাত ১০টার দিকে।
অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ছাত্র-জনতার বিজয় র্যালি, শিশু শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, নবনির্মিত ‘জুলাই৬’ ছাত্র হলের উদ্বোধন, সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণ, শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন চৌধুরী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মঙ্গলবার ৫ আগস্ট, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসন ভবন থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়ালের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি বের হয়। এতে জুলাই যোদ্ধা ছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। পরে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন হলে পাবনা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ছাত্র হল ‘জুলাই৬’ এর উদ্বোধন করেন পাবনা জেলার শহীদ ৬ জনের স্বজনরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের যোদ্ধা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।
সন্ধ্যায় কনভেনশন হলে শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, আমরা চাই সামনের নির্বাচনে বিজয়ীরা বাংলাদেশকে ধারণ করবেন। তাদের দেশ পরিচালনা ব্যবস্থা এমন হবে যাতে এদেশে আর কোন আন্দোলন সংগ্রাম করার প্রয়োজন হবে না। অবহেলিত গ্রামীণ অর্থনীতির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে যাতে গ্রামের কৃষি অর্থনীতি সুদৃঢ় হয়ে ওঠে। কৃষিকাজের আধুনিকীকরণ করা হবে। কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কৃষি শ্রমিকে পরিণত করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি পাল্টে যাবে। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এর ফলে শহর আর গ্রামের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না। বৈষম্যহীন একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
তিনি আরো বলেন, এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কখনোই যুগোপযোগী ছিল না। দেশের প্রয়োজনে বেশির ভাগ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন ছাত্ররা। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না। ছাত্ররা নিজেরা নিজেদেরকে তৈরি করবে আমরা সেই শিক্ষা ব্যবস্থা চাই। আগামীতে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন তারা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে বিশেষ নজর দিবেন বলে আমরা আশা করছি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসান। এছাড়াও জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন শহীদ স্বজনদের মধ্যে শহীদ জুলকার নাইনের বাবা, শহীদ মাহাবুব হাসান নিলয়ের বাবা, শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী, শহীদ হান্নানের ছেলে, শহীদ জাহিদের ভাই। আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন জুলাই যোদ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মুন্নাহার রিতু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলাই যোদ্ধা মিরাজুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম, মোজাহিদ হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শেষে পাবনা জেলার শহীদ স্বজনদের ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই যোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করেন উপাচার্যসহ অতিথিবৃন্দ। রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষ হয়।