
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ১০ম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবার দায়ের করা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সাপখাওয়া এলাকায়।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গাগলা খামারটারী এলাকার রাব্বী মিয়া, নাগেশ্বরী পৌরসভা এলাকার বাঁশেরতলের জুলহাস মিয়া, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সাপখাওয়া এলাকার শফিয়ার রহমান ওরফে শফি কন্ট্রাক্টর এবং রায়গঞ্জ ইউনিয়নের গাটিরখামার এলাকার ইউপি সদস্য মোতালেব মিয়া। এর মধ্যে রাব্বী মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত রোববার (৩ আগস্ট) নাগেশ্বরী থানায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার দায়ে ইউপি সদস্য ও ঠিকাদারসহ এ চারজনের নামে মামলা করেন ভুক্তভোগীর বাবা।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, রাব্বী মিয়া ওই কিশোরীর জেঠাতো বোনের স্বামী। সে প্রায়ই কিশোরীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিতো। এ নিয়ে রাব্বীকে সতর্ক করেন কিশোরী। গত ২৩ জুলাই কিশোরীকে নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমী ফুটবল মাঠে হস্ত, বস্ত্র ও কুটির শিল্প মেলায় ডেকে আনে। ঘোরাঘুরির পর কোমল পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক খাওয়ালে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এসময় অভিযুক্ত রাব্বি তার গাগলা খামারটারীর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে আবারও তাকে চেতনানাশক খাইয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাগেশ্বরী থেকে দূরপাল্লার বাসে ঢাকায় অজানা উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয়। সকালে ঢাকায় পৌঁছার পর বাসের সুপারভাইজার কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাকে বোনের বাসায় নিয়ে যান এবং রাতে ফিরতি বাসে তাকে নাগেশ্বরী পাঠিয়ে দেন।
এদিকে, পরদিন সকালে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামলে তাকে রাব্বী, জুলহাস ও মোতালেব মেম্বার জোর করে পৌরসভার হাসেম বাজার এলাকার ফারুক হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে ফের ধর্ষণ করে রাব্বী। আবারও তাকে চেতনানাশক খাওয়ানো হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় অচেতন কিশোরীকে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড এনে জুলহাসের হাতে তুলে দেয় রাব্বী। অটোরিকশায় করে রায়গঞ্জ বোর্ডের বাজারের পাশে শফির আত্মীয়ের বাড়িতে এনে কিশোরীকে রাতভর পালাক্রমে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে হত্যার হুমকি দেয় ধর্ষকরা। ভোরে কিশোরীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তারা। পরে নানার বাড়িতে যায় কিশোরী। পাঁচদিন পর নাগেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। পরে থানায় অভিযোগ করলে তিন আগস্ট মামলা নেয় পুলিশ। বাকি আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী কিশোরীর বাবা জানায়, আমি আসামিদের উপযুক্ত বিচার চাই। সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে এর কঠিন বিচার চাই।
এক সপ্তাহ পরে থানায় অভিযোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ৮ দিন আমার মেয়ে কথা বলতে পারেনি। অচেতন ছিল। ও না বললে কার নামে মামলা করি। ঘটনা শুনে থানায় গেছি।
বাড়ি ফেরার ৫ দিন পর হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে জানান, বাংলা ডাক্তার (স্থানীয় চিকিৎসক) দিয়ে চিকিৎসার পর বেশি অসুস্থ হলে মেয়েকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাগেশ্বরী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে (মঙ্গলবার) আসামিকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে ঘটনা নিয়ে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম জানান, মামলার প্রধান আসামি রাব্বি মিয়া গ্রেপ্তার হয়েছে। ভুক্তভোগী কয়েকদিন পর থানায় অভিযোগ করেছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই প্রাথমিক তদন্ত করে মামলা নেয়া হয়েছে। এখনও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।