
দীর্ঘ পরিশ্রম, বিস্তর রাতজাগা, আর ইচ্ছের অজস্র চাপ পেরিয়ে প্রথমবারের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পা রেখেছে দুই সহস্রাধিক নবীন শিক্ষার্থী। তাদের পদচারণায় মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। আজ তারা ঢুকেছে এক নতুন দুনিয়ায়। যে দুনিয়ায় বন্ধুদের সাথে মজাও আছে, আছে আত্মোন্নয়নের প্রচুর সুযোগ। পুরোনো স্কুলকলেজের অভ্যস্ত পরিবেশ ছেড়ে আজ তারা দাঁড়িয়েছে স্বতন্ত্র এক জগতের সামনে। যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ নিজের তৈরি করতে হয়।
প্রথম দিন ক্যাম্পাসে এসে কেউ হয়ত একটু লাজুক, কেউ খুব উচ্ছ্বসিত, কারও চোখে আনন্দ অশ্রু আবার কারও মুখে হাসি। নিজের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির তালিকায় দেখে চোখের কোনায় জল ধরে রাখা অনেকেরই অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। মা-বাবার মুখে গর্বের সেই হাসি, প্রতিবেশীর অভিনন্দন, ছোট ভাই-বোনের আদর সব মিলিয়ে এই অর্জনের স্বাদই আলাদা।
প্রথম দিনের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পরিচিত কেউ নেই, পরিবেশ সম্পূর্ণ অচেনা, আর নিজের মতো করে পরিচিত হওয়ার একটা স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টা। নতুন বন্ধু বানানোর ঝোঁক, বিভাগের ক্লাসরুম খুঁজে পাওয়ার উত্তেজনা, আর প্রথম প্রফেসরের বক্তৃতা, সব মিলিয়ে এক আবেগঘন শুরু।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মানে শুধু একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া নয়, বরং এক বিশাল প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করা। এই যাত্রা সহজ ছিল না। এক ঘণ্টার একটি পরীক্ষায় ভবিষ্যতের দরজা খোলার জন্য অপেক্ষা করে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। সেই কঠিন যুদ্ধে যারা জিতে গেছে, তারা সত্যিকার অর্থেই বিজয়ী।
আজকের এই শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের গবেষক, উদ্যোক্তা, প্রশাসক কিংবা সংস্কৃতি-কর্মী হয়ে উঠবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেঞ্চ, করিডোর, ক্লাসরুম, আর রাতের আকাশের নিচের সেই চুপচাপ বসে থাকার মুহূর্তগুলো একদিন তাদের জীবনের দিকনির্দেশনা ঠিক করে দেবে। তাদের সামনে এখন অগণিত পথ। কেউ সেই পথ বেছে নেবে সাহসিকতায়, কেউবা আত্মবিশ্বাস দিয়ে। কিন্তু শুরুটা আজ হলো। যে শুরু স্বপ্নের, যে শুরু সংগ্রামের, আর যে শুরু এক নতুন পরিচয়ের।
অনুভূতি প্রকাশ করে 'ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ইউসুব নূর হেলালি বলেন, আমি শ্রদ্ধা ভরে সরন করছি আমার মা বাবা কে যাদের ভালোবাসায় আমার এ সফলতা। নিঃসন্দেহে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ভর্তি হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে। বর্তমান সময়ে এসেও ইবির ভর্তি প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত জটিল। যা নবীন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ।
আল-ফিকহ এন্ড ল' বিভাগের শিক্ষার্থী আল আবি রায়হান বলেন, আজ খুবই আনন্দের একটি দিন। আমরা এক ঝাঁক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের এইচএসসির পরে অ্যাডমিশন যাত্রা শুরু করেছিলাম। আজ আমি আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের, স্বপ্নের ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছি। ডিপার্টমেন্টকে অশেষ ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনেই একাডেমিক ক্যালেন্ডার পেয়ে খুশি হয়েছি আমরা।
মাহা স্বপ্নন মিতু নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে আমি চান্স পেয়েছি। সর্বপ্রথম মহান আল্লাহতালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। উনি উনার অশেষ রহমতে আমি এখানে আসতে পেরেছি। আজকে আমাদের ওরিয়েন্টেশন শুরু হয়ে গেছে। আমার ডিপার্টমেন্টের আমার সিনিয়র ভাই এবং আপুদেরকে আমি অনেক ধন্যবাদ জানাই। উনারা আজকে আমাদের জন্য এতো সুন্দর একটা দিনের আয়োজন করেছেন। এই ১৭৫ একরে এসে আমি আসলেই সত্যি অভিভূত। অনেক সুন্দর একটা ক্যাম্পাস।