ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ক্যাম্পাস রাজনীতির বড় মাধ্যম ফেসবুক

ক্যাম্পাস রাজনীতির বড় মাধ্যম ফেসবুক

সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির প্রচারমাধ্যম হিসেবে যেটি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে, তা হলো ফেসবুক। ফেসবুক যেমন ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত করছে, তেমনি উত্তরণের পথও তৈরি দিয়েছে। কাউকে করেছে জনপ্রিয়, কাউকে করেছে বিতর্কিত।

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক চর্চার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এখানে গড়ে ওঠে নেতৃত্ব, জন্ম নেয় আন্দোলন, আবার সংঘাতও তৈরি হয়। একসময় দেয়াললিখন, পোস্টার, লিফলেট কিংবা মাইকিং ছিল ছাত্ররাজনীতির প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসে সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন আর রাতভর দেয়াল রাঙানোর প্রয়োজন পড়ে না—একটি ফেসবুক পোস্ট বা লাইভ ভিডিও মুহূর্তেই হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে যায়। ফলে ক্যাম্পাস রাজনীতির নতুন মঞ্চ হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুক।

তাৎক্ষণিকতা

ফেসবুকের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর তাৎক্ষণিক প্রচারের ক্ষমতা। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে চাইলে পোস্টার ছাপিয়ে টাঙাতে সময় লাগে। কিন্তু ফেসবুক ইভেন্ট খুলে দিলে কয়েক মিনিটেই তথ্য ছড়িয়ে যায় পুরো ক্যাম্পাসে। একইভাবে জরুরি মিটিং, প্রতিবাদ সমাবেশ বা মানববন্ধনের খবর মুহূর্তেই পৌঁছে যায় শিক্ষার্থীদের কাছে। ফলে সংগঠন পরিচালনা সহজ হয়ে গেছে।

দৃশ্যমান ও স্পষ্ট বার্তা

আজকের শিক্ষার্থীরা দৃশ্যভিত্তিক কনটেন্টে বেশি সাড়া দেয়। তাই রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এখন ফেসবুকে পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার বা সংক্ষিপ্ত ভিডিও ব্যবহার করে তাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। একটি ফেসবুক লাইভে নেতার বক্তব্য সরাসরি শোনা যায়, আবার তা রেকর্ড আকারে থেকে যায় ভবিষ্যতের জন্য। এই ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট অনেক সময় সরাসরি সমাবেশের চেয়ে বেশি কার্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

মতামত গঠন

ক্যাম্পাস রাজনীতির ক্ষেত্রে মত গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে যেখানে ক্যাফেটেরিয়া বা হলে বসে আলোচনা হত, এখন তার বড় অংশই চলে এসেছে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে। শিক্ষার্থীরা সেখানে বিতর্কে অংশ নেয়, নিজেদের মতামত প্রকাশ করে, আবার নেতাদের সরাসরি প্রশ্নও করতে পারে। ফলে নেতৃত্ব ও অনুসারীর মধ্যে যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি হয়েছে।

প্রচারণার মাধ্যম

কোনো নির্বাচনী সময় এলে ফেসবুক হয়ে ওঠে প্রচারণার মাঠ। প্রার্থীরা নিজের কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিশ্রুতি কিংবা ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে ফেসবুক ব্যবহার করে। প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষও পাল্টা প্রচারণায় নামে। লাইক-কমেন্ট-শেয়ারের প্রতিযোগিতা তখন বাস্তব নির্বাচনী উত্তেজনার প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে।

নেতিবাচক দিক

তবে সবটাই ইতিবাচক নয়। অনেক সময় ফেসবুকে অপপ্রচার, গুজব কিংবা বিদ্বেষমূলক কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ে, যা সংঘাত সৃষ্টি করে। একইভাবে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হেয় করার প্রবণতাও দেখা যায়। আবার বাস্তব কর্মকাণ্ডের চেয়ে ‘অনলাইন উপস্থিতি’কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হলে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ফেসবুক রাজনীতির এই দিকটি যেমন সহজ করেছে, তেমনি কিছু ঝুঁকিও তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ

ফেসবুক ক্যাম্পাস রাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে—তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি শুধু প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং একটি নতুন সাংস্কৃতিক ধারা তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীরা এখন ডিজিটাল পরিচয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক সক্রিয়তা প্রকাশ করছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য ডিজিটাল টুল যুক্ত হলে এই ধারা আরও পরিবর্তিত হতে পারে।

মাধ্যম ফেসবুক,ক্যাম্পাস রাজনীতি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত