অনলাইন সংস্করণ
১৬:৫১, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলসহ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নতুন একটি স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানসম্মত শিক্ষা, সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ, দ্রুত ফল প্রকাশ এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে বলা হয়, ঢাকার সাত সরকারি কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মানসম্মত শিক্ষা ও সময়মতো পরীক্ষা–ফল প্রকাশের যে দাবি ছিল, তারই প্রেক্ষিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠায়। খসড়াটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিভাগটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ অংশীজনের মতামত আহ্বান করা হয়। এতে পাঁচ হাজারের বেশি মতামত জমা পড়ে।
অনলাইন ও সরাসরি মতবিনিময়ের পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নিয়ে খসড়াটি পুনর্মূল্যায়ন ও পরিমার্জনের কাজ চলছে।
অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে জানিয়ে বিভাগটি জানিয়েছে, প্রস্তুতির এই সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সাত কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ক্লাস পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে সাত কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অপারেশন ম্যানুয়েলও অনুমোদিত হয়েছে। এর ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ২৩ নভেম্বর ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিভাগটি বলেছে, উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ, সাত কলেজের শিক্ষক–কর্মকর্তাদের পদ সংরক্ষণ, কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কার্যক্রমসহ নানা জটিলতা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হবে। এতে সময় লাগলেও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ আরও জানায়, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও অভিভাবকদের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ইতিবাচক একাডেমিক পরিবেশ গড়ে তোলাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। ব্যক্তিগত ধারণা বা গুজবের ভিত্তিতে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়েও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মার্চ রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি নতুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। ইউজিসি প্রস্তাবিত এই নাম অনুমোদন করে। কলেজগুলো হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।