
সাংবাদিক শরীফ ওসমান হাদীর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং রাজধানীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে সংঘটিত ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম। সংগঠনটি এসব ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দপ্তর সম্পাদক অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ-এর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ইনকিলাব সম্পাদকীয় বিভাগের সাব-এডিটর ও জ্বালানি অনুসন্ধানবিষয়ক সাপ্তাহিক সাময়িকী শরীর-এর সহযোগী সম্পাদক শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যু কেবল একজন সাংবাদিকের মৃত্যু নয়; এটি সত্যনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর আরেকটি নির্মম আঘাত।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শরীফ ওসমান হাদী অন্যায়, অবিচার ও স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতার বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান নিয়েছিলেন। ন্যায় ও সত্যের প্রশ্নে তাঁর দৃঢ়তা তাকে ঝুঁকির মুখে ফেললেও রাষ্ট্রীয়ভাবে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় এমন মৃত্যুর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
বিবৃতিতে সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শাকিল বাবু এবং সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) শ্রাবণ মণ্ডল বলেন, একজন সাহসী সাংবাদিকের মৃত্যু এবং পরপর গণমাধ্যমে হামলা প্রমাণ করে, দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এটি নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত কণ্ঠরোধের অংশ।
একই সঙ্গে বিবৃতিতে রাজধানীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়ে হামলা, অফিস ভাঙচুর এবং নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবিরকে শারীরিকভাবে হেনস্তার ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও গণমাধ্যমবিরোধী সহিংসতা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সাংবাদিক ফোরামের মতে, একটি স্বার্থান্বেষী ও উগ্র গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গণমাধ্যমকে টার্গেট করছে। এই সহিংসতা অব্যাহত থাকলে শুধু সাংবাদিকরাই নয়, পুরো গণতান্ত্রিক কাঠামোই মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা সরাসরি রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম অবিলম্বে এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের বিচার এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানায়। একই সঙ্গে সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর যে কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
সংগঠনটি বিশ্বাস করে, শরীফ ওসমান হাদীর আদর্শ, সাহসী অবস্থান ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য দীর্ঘদিন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে—যদিও তার মৃত্যুর দায় রাষ্ট্র ও সমাজ এড়িয়ে যেতে পারে না।