ঢাকা রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এ কে খন্দকারের শেষকৃত্য

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এ কে খন্দকারের শেষকৃত্য

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আব্দুল করিম খন্দকার, বীর উত্তম, পিএসএ (অবঃ) ২০ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ১০:৩৫ ঘটিকায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর ১১ মাস ২০ দিন। তিনি মৃত্যুকালে ২ পুত্র, ১ কন্যা ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মরহুমের জানাজা ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, রবিবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানস্থলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সামরিক সচিব, উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া মরহুমের পরিবারের সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং অন্যান্য পদবীর প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

ফিউনারেল প্যারেড শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দকারকে বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারে অবস্থিত শাহীন কবরস্থানে দাফন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক ফ্লাই পাস্টও অনুষ্ঠিত হয়।

এয়ার ভাইস মার্শাল আব্দুল করিম খন্দকার ১ জানুয়ারি ১৯৩০ সালে পাবনার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় মালদা জেলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে, পরবর্তীতে পাকিস্তান বিমান বাহিনী কলেজ, রিসালপুর থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ৫ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমীতে যোগদান করেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ সালে জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন।

তিনি চাকুরিকালীন সময়ে ৩৪০০ ঘন্টারও অধিক উড্ডয়ন পরিচালনা করেন এবং বিভিন্ন দেশ-বিদেশের প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেন।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকাস্থ পাকিস্তান বিমান বাহিনী ঘাঁটিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়, তিনি ৭ জন বাঙ্গালী কর্মকর্তা ও কিছু বিমানসেনাকে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ১২ মে ১৯৭১ তারিখে ঢাকা থেকে ত্রিপুরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। মুজিবনগর সরকার তাঁকে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত করেন।

তিনি অপারেশন ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে প্রথম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠন করেন। মাত্র ৯ কর্মকর্তা, ৫৭ বিমানসেনা ও ৩টি বিমান নিয়ে পরিচালিত এ বাহিনী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান সম্পন্ন করে।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর ৭ এপ্রিল ১৯৭২ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা উত্তর দুই বছরের মধ্যে তিনি ফাইটার স্কোয়াড্রন, হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রন এবং রাডার ইউনিট সংযোজন করেন।

এছাড়া জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৫ অক্টোবর ১৯৭৫ তারিখে দীর্ঘ ২৩ বছর ১৯ দিন কমিশন চাকরি শেষে তিনি বিমান বাহিনী প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৬-১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ১৯৮২-১৯৮৬ সালে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পর দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল তার নামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটির নামকরণ করা হয়।

এ কে খন্দকারের শেষকৃত্য,সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান,রাষ্ট্রীয় মর্যাদা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত