অনলাইন সংস্করণ
১৩:০২, ১৭ আগস্ট, ২০২৫
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কেবল একটি প্রযুক্তি নয়! প্রতিদিনকার কাজের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠছে। লেখালেখি থেকে শুরু করে ডিজাইন, ডেটা বিশ্লেষণ, মার্কেটিং কিংবা সাংবাদিকতাণ্ড সব ক্ষেত্রেই এআই টুল ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু এআই ব্যবহার করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসে ‘প্রম্পট’ লেখা নিয়ে। এআইকে আপনি কী করতে বলছেন, কতটা পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেটির ওপরই নির্ভর করে ফলাফল কেমন হবে। ভুলভাবে লেখা প্রম্পট এআইকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আর সঠিকভাবে লেখা প্রম্পট থেকে মিলতে পারে কাঙ্ক্ষিত এবং মানসম্মত আউটপুট। প্রশ্ন হলো- একটি ভালো প্রম্পট কীভাবে লিখবেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই প্রম্পট লেখার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করলে কাজ অনেক সহজ হয়।
ভালো প্রম্পট লেখার ৫টি সহজ ধাপ
১. Role: এআইকে ভূমিকা দিন : প্রম্পট লেখার সময় প্রথমেই এআইকে একটি স্পষ্ট ভূমিকা দিতে হবে। আপনি চাইলে এআইকে লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ডিজাইনার কিংবা ডেভেলপার- যে কোনো ভূমিকায় দাঁড় করাতে পারেন। যেমন ‘তুমি একজন সংবাদ সম্পাদক। আজকের বড় রাজনৈতিক ইভেন্ট নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন লেখো।’ ‘তুমি একজন অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটার। ফেসবুক বিজ্ঞাপনের জন্য আকর্ষণীয় কপি তৈরি করো।’ ভূমিকা নির্ধারণ করলে এআই বুঝতে পারে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর দিতে হবে। এতে টোন, স্টাইল, এমনকি তথ্য উপস্থাপনের ধরনও নির্দিষ্ট থাকে।
২. Tasks: কী করতে হবে তা পরিষ্কারভাবে বলুন : শুধু ভূমিকা দিলেই হবে না, এআইকে সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে হবে তার কাজ কী। অস্পষ্ট নির্দেশনা দিলে আউটপুটও অস্পষ্ট হয়। যেমন ‘৫০০ শব্দের একটি ব্লগ পোস্ট লিখো যেখানে বাংলাদেশের ডিজিটাল সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরা হবে।’ ‘আমাকে একটি ইনফোগ্রাফিক বানানোর ধারণা দাও যেখানে অনলাইন শিক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা তুলনা করা যাবে।’
৩. Audience: কার জন্য লেখা বা কনটেন্ট তৈরি হবে : একটি লেখা শিশুদের জন্য হলে ভাষা হবে সহজ, তরুণদের জন্য হলে টোন হবে আকর্ষণীয়, আর গবেষকদের জন্য হলে ব্যবহার হবে পরিশীলিত ভাষা ও তথ্যসূত্র। তাই প্রম্পটে এআইকে বলে দিন টার্গেট অডিয়েন্স কারা। যেমন ‘বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০০ শব্দের একটি নিবন্ধ লেখো যেখানে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ আলোচনা করা হবে।’ ‘২৫ বছর বয়সি সাধারণ পাঠকের জন্য সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করো কেন ডলার রেট বাড়ছে।’ অডিয়েন্স নির্দিষ্ট না করলে লেখা অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে। কখনও খুব জটিল, কখনও আবার অতিরিক্ত সহজ হয়ে যেতে পারে। সঠিক পাঠক চিনিয়ে দিলে কনটেন্ট হয় প্রাসঙ্গিক এবং কার্যকর।
৪. Context: প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে দিন : প্রম্পটে এআইকে প্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড দিলে আউটপুট হয় অনেক বেশি নির্ভুল। প্রেক্ষাপট ছাড়া এআই ধরে নেয় যে বিষয়টি সাধারণ। কিন্তু আপনি যদি স্থানীয় কোনো বিষয় নিয়ে কাজ করেন তবে প্রেক্ষাপট উল্লেখ করতেই হবে। যেমন ‘তুমি একজন সাংবাদিক। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখো। প্রতিবেদনটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য হবে। যেখানে পাঠকের বয়স গড়পড়তা ২৫ বছর।’
‘তুমি একজন টেক এক্সপার্ট। ব্যাখ্যা করো কিভাবে বাংলাদেশে ইন্টারনেট গতি ধীরগতির প্রভাব ফেলছে অনলাইন ব্যবসায়।’ প্রেক্ষাপট দিলে এআই জানে কোথায় ফোকাস করতে হবে, কোন তথ্যগুলো প্রাধান্য পাবে, আর কোন বিষয়গুলো বাদ যাবে।
৫. Format: আউটপুটের কাঠামো নির্ধারণ করুন : সবশেষে এআইকে জানান, আপনি কনটেন্ট কোন ফরম্যাটে চান। এটি হতে পারে সংবাদ প্রতিবেদন, ব্লগ পোস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন, স্ক্রিপ্ট, প্রেস রিলিজ, লিস্টিকল, ইনফোগ্রাফিক আইডিয়া কিংবা টেবিল আকারে ডেটা উপস্থাপন। যেমন ‘বাংলাদেশে অনলাইন শিক্ষার প্রবণতা নিয়ে একটি ব্লগ লিখো, যেখানে থাকবে ভূমিকা, মূল আলোচনা, উপসংহার এবং ঋঅছ সেকশন।’ ‘স্মার্টফোনের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে একটি টেবিল আকারে তুলনামূলক বিশ্লেষণ দাও।’
ফরম্যাট ঠিক না করলে এআই দীর্ঘ লেখা দিলেও তা কাঠামোবদ্ধ হয় না। ফলে পাঠযোগ্যতা কমে যায়। ফরম্যাট নির্ধারণ করলে কনটেন্ট হয় সুন্দরভাবে সাজানো এবং ব্যবহার উপযোগী।