
লোকমান হাকিম কোরআনে উল্লেখিত সেই বিরল ব্যক্তিদের একজন, যিনি নবী ছিলেন না, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া তার প্রজ্ঞা ও উপদেশকে কোরআনে স্থান দেওয়া হয়েছে। আরব সাহিত্যেও প্রজ্ঞা ও প্রবাদের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন তিনি। লোকমান হাকিম তার ছেলেকে কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন, আল্লাহতায়ালা কোরআনে তার এই অমূল্য উপদেশগুলো তুলে ধরেছেন। এ উপদেশগুলো শুধু পিতার পক্ষ থেকে সন্তানকে দেওয়া দিকনির্দেশনা নয়, বরং গোটা মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয়।
কৃতজ্ঞতা- প্রজ্ঞার মূল ভিত্তি : আরবদের দৃষ্টিতে প্রজ্ঞা মানে শুধু জ্ঞান আহরণ নয়, বরং তা প্রয়োগ করা। লোকমানের প্রজ্ঞার মূল শিক্ষা ছিল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কোরআনে এসেছে, ‘আর আমি তো লোকমানকে হিকমাত দিয়েছিলাম (এবং বলেছিলাম) যে, ‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর। আর যে শুকরিয়া আদায় করে সে তো নিজের জন্যই শুকরিয়া আদায় করে এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।’ (সুরা লোকমান : ১২)।
১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না : আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় জুলম’। (সুরা লোকমান : ১৩)।
পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রিয় বৎস, নিশ্চয় তা (পাপ-পুণ্য) যদি সরিষা দানার পরিমাণ হয়, অতঃপর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানসমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ’। (সুরা লোকমান : ১৬)।
২. পিতামাতার হক আদায় করো : আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই। (সুরা লোকমান : ১৪)। তবে যদি আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কিছু নির্দেশ দেন, সেক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দিতে হবে। (সুরা লোকমান : ১৫)।
৩. নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, সৎকাজে উৎসাহ দাও, অন্যায় থেকে বিরত রাখো : হে আমার প্রিয় বৎস! নামাজ কায়েম করো, সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ কর। (সুরা লোকমান : ১৭)।
৪. ধৈর্য ধারণ করো : আর তোমার ওপর যা আপতিত হয় তাতে ধৈর্য ধারণ করা। নিশ্চয় এটা অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সুরা লোকমান : ১৭)।
৫. অহংকারী হয়ো না : আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না’। (সুরা লোকমান : ১৮)।