
রিজিক দুই প্রকার- হালাল রিজিক ও হারাম রিজিক। কোনো ব্যক্তি যখন শরিয়তসম্মত পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তা ভোগ করে, তখন তাকে হালাল রিজিক বলে। এর বিপরীতে যখন কোনো ব্যক্তি অবৈধ পন্থায় কোনো সম্পদ উপার্জন করে তা ভোগ করে, তখন তা তার জন্য হারাম রিজিক হিসেবে সাব্যস্ত হয়। রিজিক হাসিলের ক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালা বৈধ পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে হালাল রুজি ভক্ষণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র খাদ্যদ্রব্য থেকে ভক্ষণ কর, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয় সে (শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা : ১৬৮)। এ আয়াতের শেষাংশে আল্লাহতায়ালা হারাম রিজিক ভক্ষণের মাধ্যমে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ যারাই হারাম রিজিক উপার্জন কিংবা ভক্ষণ করবে, তারাই আল্লাহতায়ালার আদেশ অমান্য করে শয়তানের অনুসরণ করবে। আর শয়তান হলো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
মুমিনদের উদ্দেশে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আমার দেওয়া রিজিক হতে পবিত্র খাদ্যদ্রব্য আহার করো, আর আল্লাহতায়ালার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।’ (সুরা বাকারা : ১৭২)। সব নবী-রাসুলকেও তিনি একই নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুলগণ! আপনারা পবিত্র খাদ্যদ্রব্য আহার করুন এবং সৎ কাজ করুন। আপনারা যা কিছু করেন, সে ব্যাপারে আমি অবগত।’ (সুরা মোমিনুন : ৫১)। রাসুল (সা.) হালাল রুজি উপার্জনকে ফরজ ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ফরজ কাজসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম ফরজ।’ (তাবারানি : ৯৯৯৩)। হালাল রিজিকের দ্বারা ইবাদতের তৌফিক লাভ হয়, অন্তরে নুর পয়দা হয়, ইলমে বরকত হয়, মনে সৎ সাহস সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে হারাম রিজিক উপার্জনের কারণে অন্তর কালো হয়, ইবাদতে অনীহা আসে ও কাপুরুষতা বৃদ্ধি পায়। বর্ণিত আছে, ভারতের দেওবন্দে এক সাধারণ দিনমজুর ছিলেন। নাম তার শাহজী আবদুল্লাহ। কাঁচা ঘাস বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। প্রতিদিন এক বোঝা ঘাস নিয়ে বাজারে এসে একদামে ছয় পয়সায় বিক্রি করতেন। নীতিবান লোক ছিলেন তিনি। প্রতিদিনের এ আয়কে তিনি তিন ভাগে ভাগ করে দুই পয়সা গরিব-মিসকিন ও অসহায় বিধবাদের মাঝে বণ্টন করে দিতেন। দুই পয়সা দিয়ে সংসারের খরচ চালাতেন, আর দুই পয়সা জমা করতেন। এভাবে বছরে সাত টাকার চেয়ে কিছু বেশি পয়সা জমা হতো। এই জমানো টাকা দিয়ে তিনি বছরে একবার আলেমণ্ডওলামাদের দাওয়াত করে খাওয়াতেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবি (রহ.) বলেন, ‘আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকতাম, দিনমজুর শাহজীর ঘরে দাওয়াত কবে হবে। কেননা, সেখানে একবেলা খাবার খেলে ৪০ দিন পর্যন্ত অন্তরে নুর থাকত। মন চাইত, বেশি বেশি নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত আর জিকির করি।’