ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও সওয়াব

আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও সওয়াব

আমানত আরবি শব্দ, যার অর্থ গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা, প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা। ইসলামের পরিভাষায় কারও কাছে কোনো অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখাই আমানত। যিনি গচ্ছিত দ্রব্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেন এবং এর প্রকৃত হকদার বা মালিক চাওয়ামাত্র তা অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন তাকে ‘আমানতদার’ বলা হয়। অপরদিকে অন্যের গচ্ছিত সম্পদ মালিকের কাছে যথাযথ প্রত্যর্পণ না করে আত্মসাৎ করাই হচ্ছে খেয়ানত। যে ব্যক্তি লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যের গচ্ছিত সম্পদ খেয়ানত করে, সে আত্মসাৎকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষের অর্থলিপ্সা তাকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে ফেলে। ফলে সে বৈধ-অবৈধ সব পন্থায় অর্থ-সম্পদ লাভে ব্রতী হয়। তাই ইসলামে আমানত সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে বা ফেরত দেবে’ (সুরা নিসা : ৫৮)।

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না।’ (সুরা বাকারা : ১৮৮)।

ইসলামের আদর্শ বাস্তবায়নে এবং সুখী-সমৃদ্ধ সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণে আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমানত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং আমানতদারকে সবাই ভালোবাসে। আমানত রক্ষা তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে পরকালে জান্নাতের পথ সুগম হয়। আমানতদারির পুরস্কার ঘোষণা করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আমানত রক্ষা করে তারা জান্নাতুল ফেরদাউস নামক উদ্যানের অধিকারী হবে, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা মোমিনুন : ১১)।

মোমিন বান্দার জীবনের সর্বাপেক্ষা সম্পদ হলো আমানতদারি। যাদের ঈমান ঠিক আছে তারা আমানতের খেয়ানত করতে পারে না। আর যারা অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ বা খেয়ানত করে তারা প্রকৃত মুমিন নয়, তারা প্রতারক, ভণ্ড ও মোনাফেক।

হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন যাতে তিনি বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই। আর যে ওয়াদা রক্ষা করে না, তার মধ্যে দ্বীন নেই।’ (মুসনাদে আহমদ : ১/৮০৫)।

পার্থিব জগতে প্রতিটি নর-নারীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকের ওপর দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো আমানতের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (তিরমিজি : ১২৪)।

ব্যাপক অর্থে একের কাছে অন্যের জান-মাল, মান-সম্মান সবই আমানত। কোনো ব্যক্তি যদি কারও কাছে গোপন কথা বলে, সে কথাও একটি আমানতস্বরূপ। আল্লামা কুরতুবি (রহ.)-এর মতে, আমানতদারির বিষয়টি ইসলামি জীবন পদ্ধতির সবকিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনা, সরকারি ও বেসরকারি অফিসিয়াল কাজকর্ম, শিক্ষকতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, মজুরি, শ্রম, দেশপ্রেম ইত্যাদি আমানত। একজন মুমিনের সব ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করা পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমানতের খেয়ানত করা কবিরা গোনাহ ও মোনাফেকের আলামত। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মোনাফেকের আলামত তিনটি ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন প্রতিশ্রুতি প্রদান করে তা রক্ষা করে না, ৩. যখন তাদের কাছে আমানত গচ্ছিত রাখা হয় তারা তার খেয়ানত করে।’ (বোখারি : ২৬৮২)।

আমানতদারিতার ওপর জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। তাই ইসলাম প্রতিটি ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির মধ্যে আমানতদারিতা ও বিশ্বস্ততা তৈরির মধ্য দিয়ে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য আমানতদারিতার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে।

আমাদের প্রিয়নবী (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ আমানতদার। অল্প বয়সেই তিনি ‘আল-আমিন’ তথা অতিবিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর সাহাবিরাও ছিলেন আমানতদারিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার সঙ্গে চারটি জিনিস থাকলে পৃথিবীর সব হারিয়ে ফেললেও তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না ১. আমানতের সংরক্ষণ, ২. সত্যবাদিতা, ৩. উত্তম চরিত্র ও ৪. পবিত্র রিজিক’ (আল মুসতাদরাক লিল হাকিম : ৭৯৮৯)।

আমানত,গুরুত্ব
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত