ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজকে ঘিরে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন এবং দাবির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের মার্চে এই প্রস্তাবনা আসে, যা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের অংশ হিসেবে ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াসকে সাত কলেজের প্রথম প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নতুন এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকবে— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি বালিকা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এই কলেজগুলোতে নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। তবে বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ডিইউ অধিভুক্ত হিসেবেই শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। এ অবস্থায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে ভর্তি কার্যক্রম চলবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়নি।
এই পরিবর্তনের ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা এবং বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসক অধ্যাপক ইলিয়াস এ বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আশ্বস্ত করেছে যে, কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক স্তর বহাল থাকবে এবং শিক্ষকদের পদায়নেও কোনো পরিবর্তন আসবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো এখনো চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিকভাবে প্রতিটি কলেজকে আলাদা অনুষদ হিসেবে পরিচালনার প্রস্তাব এসেছে। তবে কলেজগুলোর অবস্থান শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হওয়ায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ভোগান্তি হতে পারে—এমন শঙ্কা থেকে প্রযুক্তিনির্ভর হাইব্রিড পাঠদান পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক ইলিয়াস। তার মতে, ৬০% ক্লাস শারীরিকভাবে এবং বাকি ৪০% অনলাইনে পরিচালিত হবে।
শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমানো গেলে আবাসন সমস্যার সমাধান সহজ হবে বলে মনে করেন প্রশাসক। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দের প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা যদি রাষ্ট্রিক সদিচ্ছা, আস্থা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি শিক্ষাখাতে একটি মাইলফলক হবে।'
যদিও এখনো ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’-এর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রকাশ করা হয়নি, তবুও হাজারো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক এই পরিবর্তনের বাস্তবায়নের দিকেই তাকিয়ে আছেন। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।