ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় নতুন উদ্বেগ: ভয়াবহ রূপ নিতে পারে চিকুনগুনিয়া

ঢাকায় নতুন উদ্বেগ: ভয়াবহ রূপ নিতে পারে চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া জ্বর ঢাকায় নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। গবেষণা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ‘হালকা’ জ্বর হিসেবে বিবেচিত হলেও, এই ভাইরাসজনিত রোগটি এখন রাজধানীজুড়ে উচ্চ সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি করছে। আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, চলতি জুন মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে রাজধানীতে জ্বর নিয়ে আসা ১৭১ জনের মধ্যে ১৪০ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় ৮২ শতাংশ শনাক্তের হার।

২০১৭ সালে ঢাকায় প্রথম বড় আকারে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বাস্তবে লাখো মানুষ আক্রান্ত হয়। এরপর সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগটি ‘কম গুরুত্বের’ বিবেচনায় পরীক্ষার কিট সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে এই রোগ শনাক্তের সুযোগ প্রায় নেই, রোগীকে বাধ্য হয়ে ভরসা করতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে যেমন রোগ নির্ণয় বিলম্বিত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি।

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গবেষণায় দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ উপসর্গধারী রোগী এই ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই (৮৩ শতাংশ) ৩০ বছরের বেশি বয়সী এবং ৯৬ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন গিঁটে ব্যথায়। এমনকি ২৮ দিন পরও ৮১ শতাংশ রোগীর মধ্যে উপসর্গ বজায় ছিল। প্রতিজন রোগী গড়ে ১০ দিন কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার টাকা।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। চিকিৎসা বলতে উপসর্গ নির্ভর ব্যথানাশক, বিশ্রাম ও তরল গ্রহণের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। তাই রোগ শনাক্ত করা জরুরি। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে পরীক্ষার সুযোগ সীমিত থাকায় রোগ নির্ণয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আইসিডিডিআর,বি-র গবেষক ডা. আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ জানান, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে নিয়মিত পজিটিভ কেস পাওয়া যাচ্ছে। সামনে ডেঙ্গুর মৌসুমে রোগটি আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচলের ফলে এটি সারা দেশে বিস্তার ঘটাতে পারে।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মূল বাহক এডিস মশা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে রাজধানীজুড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ আকার নিতে পারে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাবদ্ধতা এবং মশক নিধনে সঠিক কৌশল না থাকা এই সংকটের পেছনে মূল কারণ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, চিকুনগুনিয়া এখন আর শুধুমাত্র ‘হালকা জ্বর’ নয়- দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা ও দুর্বলতার কারণে এটি মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে উঠছে, বরিশালসহ অন্যান্য অঞ্চলেও মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এবার তিনটি সেরোটাইপের সংক্রমণ একসঙ্গে ঘটায় পরিস্থিতি আরও জটিল।

নিপসমের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ডা. গোলাম ছারোয়ার বলেছেন, কীটনাশক ছিটালেও এর মান ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা নেই। কোন এলাকায় কোন ধরণের ইনসেকটিসাইড ব্যবহার করা হচ্ছে তা অজানা। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

এডিস মশা দমনে বর্তমান কৌশলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাহকের প্রজাতি ও আচরণ অনুযায়ী আলাদা প্রতিরোধ কৌশল প্রয়োজন, যা এখনও অনুসরণ করা হচ্ছে না।

চিকুনগুনিয়ার জটিলতা ও পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক প্রস্তুতির তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে, রোগটি অবহেলা না করে জাতীয় পর্যায়ে মনোযোগ ও বাজেট বরাদ্দের দাবিও জোরালো হচ্ছে।

ঢাকা,উদ্বেগ,ভয়াবহ রূপ,চিকুনগুনিয়া,জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত