রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে রাতে খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে সৌদিপ্রবাসী মনির হোসেন, তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাইম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, বিষক্রিয়াজনিত কারণে মৃত্যু হতে পারে। তবে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় কেয়ারটেকার রফিকুল ইসলামকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত মনির হোসেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ঈদের আগেই তিনি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছিলেন। বড় ছেলে নাইমের চিকিৎসার জন্য শনিবার সকালে পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং মগবাজারের 'সুইট স্লিপ' নামের হোটেলে ওঠেন। সঙ্গে ছিলেন তাদের বাড়ি ও যানবাহন দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার রফিকুল।
হোটেল কর্তৃপক্ষ ও সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা গেছে, রাত ৮টার দিকে রফিকুল একটি ব্যাগে খাবার নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন। পরে মনির নিজেই নিচে নেমে পানি আনেন। রাতেই খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা, কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি।
পরদিন সকালে রফিকুল ফের হোটেলে এসে স্বপ্না ও মনিরকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং পরে নাইমকেও সেখানে নেওয়া হয়। তবে আদ-দ্বীন হাসপাতালে আনার আগেই তিনজনের মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশ মরদেহগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
স্বজনদের অভিযোগ, খাবারে কিছু মিশিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। মনিরের স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়মিত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতেন তিনি। ঘটনার দিন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় হোটেলেই রাত কাটান। পরদিন সকালে গ্রাম থেকে খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে এসে তিনজনের মরদেহ পান।
রমনা থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এটি সাধারণ ফুড পয়জনিং বলে মনে হচ্ছে না। খাবারে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও আলামত পরীক্ষার ফলাফলের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, রফিকুলসহ হোটেল সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রফিকুল দাবি করেছেন তিনি মনিরকে সঙ্গে নিয়ে খাবার কিনেছিলেন, কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তিনি একাই খাবার নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক আলামত ও তথ্য যাচাইয়ের ভিত্তিতে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এখন তদন্ত চলছে এবং বিস্তারিত জানতে অপেক্ষা করতে হবে ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্টের।