ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মৃত্যুদণ্ড নয়, ন্যায়বিচারই জরুরি—অ্যামনেস্টি ও জাতিসংঘ

মৃত্যুদণ্ড নয়, ন্যায়বিচারই জরুরি—অ্যামনেস্টি ও জাতিসংঘ

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এমন একটি বিচারব্যবস্থা প্রয়োজন, যা একযোগে ন্যায়সংগত ও পক্ষপাতহীন হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে হওয়া উচিত নয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে জুলাই মাসের ভুক্তভোগীরা প্রকৃত ন্যায়বিচার পেয়েছে বলা যাবে না। প্রকৃত ও অর্থপূর্ণ সত্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিপূরণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হতে পারে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এই বিচার ও দণ্ড ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ বা ন্যায়সংগত ছিল না।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় রয়েছে, তাদের অবশ্যই নিরপেক্ষ তদন্তের আওতায় আনতে হবে। মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও জটিল করে তোলে এবং এটি এক ধরনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক শাস্তি। ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ডের কোনো স্থান থাকা উচিত নয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ঘটনায় ১৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার ও রায় ন্যায্য বিচারের ক্ষেত্রে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করে। শেখ হাসিনার আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময়ও ছিল না বলেও মন্তব্য করে সংগঠনটি।

এদিকে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ওএইচসিএইচআর। সংস্থাটি জানায়, তারা কোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করে না।

রায় ঘোষণার পর জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, এই রায় গত বছরের জুলাই আন্দোলনে দমনপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সব ধরনের জবাবদিহির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ এবং তার পরপরই মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার বিষয়টি গুরুতর আলোচনার দাবিদার।

মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, আশা করি বাংলাদেশ সত্য উদ্ঘাটন এবং ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পুনর্মিলন ও পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে যাবে। তিনি মনে করেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে অর্থবহ সংস্কার প্রয়োজন।

রায়কে কেন্দ্র করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ–আইসিজিও। তারা বলছে, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখন খুবই ক্ষীণ।

সংস্থাটির বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক থমাস কিন বলেন, এই রায় রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য দায়বদ্ধতা নিয়ে জনমনে খুব বেশি সন্দেহ নেই। তবে বিচার প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে আসামির অনুপস্থিতিতে বিচার এবং দ্রুত শুনানি বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায়সংগততা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, এই সমালোচনাগুলো বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জকে প্রতিফলিত করে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলেও এসব চ্যালেঞ্জ যথেষ্টভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি।

থমাস কিন মনে করেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানানো পর্যন্ত দলটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসার সুযোগও কম থাকবে।

অ্যামনেস্টি ও জাতিসংঘ,ন্যায়বিচারই জরুরি,মৃত্যুদণ্ড নয়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত