ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় অনুমোদিত

বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় অনুমোদিত

দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পথে বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা আরও এক ধাপ এগিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর আগামী সপ্তাহে ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫’ নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে বলে জানান তিনি। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠক শেষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গত ২০-৩০ বছরের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।’ তিনি বলেন, “আজকে আমরা মাসদার হোসেনের মামলার রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার শেষ ধাপ সম্পন্ন করলাম।”

১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে মামলা করেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপে সরকারের অনুমোদন মিলল।

ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ এর গেজেট জারি করা হবে। তিনি জানান, “সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশেও ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সব রাজনৈতিক দল এর পক্ষে মত দিয়েছে। বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয়ের নীতিগত অনুমোদন আগেই হয়েছিল। আজ চূড়ান্ত অনুমোদন হল।”

এ অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর নিম্ন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত বিষয়, ছুটি এবং নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ—সব কিছু সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয় করবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাদেশ জারি হলে শুধু বিচার কাজে নিয়োজিত বিচারকরাই সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। তবে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জুডিশিয়াল এডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আইন কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত থাকবেন।

কখন থেকে এ সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা যাবে—এমন প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আশা করছি কয়েক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতের সচিবালয় সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে যাবে।” তিনি আরও জানান, উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক স্বাধীনতাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “যেকোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সচিবালয়ের নেতৃত্বে একটা যাচাই-বাছাই কমিটি থাকবে। যাচাই-বাছাই কমিটি প্রকল্প গ্রহণ করবে। সেই প্রকল্প একটা কমিটির কাছে পাঠানো হবে পরামর্শের জন্য। প্রধান বিচারপতির অনুমোদনক্রমে আপিল বিভাগের একজন বিচারক সেই কমিটির প্রধান থাকবেন। সুপারিশকৃত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় যদি ৫০ কোটি টাকার কম হয় সেক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এটা অনুমোদন করবেন। আর ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে এটা পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে একনেকের সভায় উপস্থাপন করবেন প্রধান বিচারপতি।”

আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘‘উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে সচিবালয়ের সব ব্যয় সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায়যুক্ত থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে যখন উচ্চ আদালতের বাজেট অনুমোদন করা হবে তখন এই বাজেট ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উচ্চ আদালতের থাকবে।’’

সচিবালয়,বিচার বিভাগ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত