ঢাকা বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১৬ ডিসেম্বর কেনো আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ

১৬ ডিসেম্বর কেনো আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বর এমন একটি দিন, যা স্বাধীন অস্তিত্বের পরম বিজয়কে প্রতীকায়িত করে। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, নির্যাতন, দুঃসহ শরণার্থী জীবন এবং জাতির সর্বাত্মক প্রতিরোধের পর এই দিনে মিলিটারি জান্তার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রিয় বাংলাদেশ। তাই ১৬ ডিসেম্বর কেবল বিজয় দিবস নয় বরং এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের চূড়ান্ত ঘোষণা।

এদিন জাতির আত্মমর্যাদার উত্থান এবং নতুন ভবিষ্যত নির্মাণের সূচনাক্ষণ। এই দিনের তাৎপর্য বুঝতে হলে আমাদের অতীত সংগ্রাম, মূল্যবোধ এবং জাতিগত চেতনার গভীরে ফিরে যেতে হয়।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য গণআন্দোলন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে বাঙালি জাতীয়তাবোধের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার পরিণতি ঘটে এই স্বাধীনতায়। পাকিস্তানি শাসকদের রাজনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং অর্থনৈতিক শোষণের ফলে বাঙালির হৃদয়ে ক্ষোভ ও বঞ্চনা তীব্র হয়ে উঠেছিল। এদিকে ২৫ মার্চের গণহত্যা সেই যুদ্ধের অনিবার্যতা নিশ্চিত করে দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ, নারী-শিশু সবাই মিলে যে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল সেটিই পরবর্তীকালে বিজয়ে রূপ নেয়। তাই এটি পরিষ্কার যে ১৬ ডিসেম্বর জাতির সম্মিলিত ত্যাগের বিজয়মালা, যেখানে প্রতিটি আত্মহুতি একটি স্বাধীন ভোরের বীজ রোপণ করেছিল।

এ দিনটির গুরুত্ব আরও গভীর হয় কারণ এটি আমাদের স্বাধীনতার নৈতিক ভিত্তিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা থেকে। বিজয় দিবস সেই স্বপ্ন ও লক্ষ্য পুনরায় নিশ্চিত করে যে, রাষ্ট্র কেবল ভৌগোলিক একটি সীমানা নয় বরং এটি জনগণের অধিকার, মর্যাদা এবং স্বাধীনভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা।

১৬ ডিসেম্বর তাই প্রতিবার আমাদের জিজ্ঞাসা করে, স্বাধীনতার লক্ষ্য আমরা কতটা অর্জন করতে পেরেছি এবং কোন জায়গায় নতুন করে দৃঢ় হতে হবে।

এ দিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে আরেকটি দিক। আর সেটি হচ্ছে জাতির আত্মপরিচয় নির্মাণ। বাঙালির কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা এবং সংস্কৃতি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে এই বিজয়ের মাধ্যমে। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা পরাধীন কিংবা ভীতু জাতি নই, আমরা লড়াই করে অধিকার আদায় করতে জানি। এই চেতনা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে নতুন সমাজ নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে এবং রাষ্ট্রকে সুশাসন, উন্নয়ন ও মানবিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে শক্তি দেয়।

অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, বিজয় দিবস আমাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধার দিন। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, নির্যাতিত নারী, গৃহহারা মানুষ সবাই এই স্বাধীনতার নির্মাতা। তাঁদের ত্যাগই ১৬ ডিসেম্বরকে পবিত্র করেছে। তাই এই দিন শুধুই আনন্দ উদযাপন নয় বরং দায়িত্ব ও ওয়াদা পালনের একটি বহুমাত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার।

এই সব কারণেই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের কাছে কেবল একটি তারিখ নয়, এটি জাতির আত্মার উজ্জ্বল আলো। যা আমাদের অতীত নির্দেশ করে, বর্তমানকে দৃপ্ত করে এবং ভবিষ্যতের পথ দেখায়। আসুন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষই আমাদের পরম কাছের মানুষ।

মনে রাখা জরুরি- আমাদের প্রতিটি নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেমবোধ, সততা ও মানবিকতার সফল কার্যক্রম দৃশ্যমান হলেই এই বিজয় হবে আমাদের পরিপূর্ণ বিজয়।

এত গুরুত্বপূর্ণ,১৬ ডিসেম্বর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত