রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণ এবং সত্য উদঘাটনে ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধান কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি সংঘটিত এক মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিশেষ করে সুপরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব তারেক রহমানের চরিত্র হননের ঘৃণ্য অপচেষ্টার প্রতিবাদে আজ আপনাদের এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসেবে লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বিএনপি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা বা উপস্থিতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারান্তে ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ সৃষ্টি করতে চান, তাদের চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ও একইসঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধান কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মামলার এজাহারের অসঙ্গতি প্রসঙ্গে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায় তাদের উল্লিখিত তিনজন অপরাধীর নামের স্থলে এমন তিনজনের নাম সংযুক্ত করা হয় যাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি, নৃশংসতার মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার দূরে থাক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখনো তাদের নাম-পরিচয় পর্যন্ত উদঘাটনে সক্ষম হয়নি। সরকারকে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানানোর পরও একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে আমাদের দল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের শালীনতা ও চরিত্রহননের দুঃসাহস প্রদর্শন করছে।
তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ড কোনো রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কি না দেখা দরকার। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এ ধরনের ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল ও তার প্রধান নেতৃত্বকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন এবং অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবারও সেই ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।
তিনি বলেন, সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পিত ফাঁদে পা না দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করার যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যে কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আমরা এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেবো না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সঙ্গে নিয়ে এ দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংকল্পে আমরা বরাবরের মতোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পতিত স্বৈরাচার আর কাপুরুষ ষড়যন্ত্রকারীদের মিলিত অপচষ্টো, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথে যদি কোনো বাধা হয়ে আসে তবে সেটা আমরা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করবো ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।