অনলাইন সংস্করণ
১৫:০৬, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫
ঐক্য, সংগ্রাম, মর্যাদা ও মুক্তির পতাকা হাতে শ্রমিকের রাষ্ট্রক্ষমতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অঙ্গসংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’। সংগঠনটির আহ্বায়ক হয়েছেন মাজহারুল ইসলাম ফকির, সদস্য সচিব রিয়াজ মোরশেদ এবং মুখ্য সংগঠক আরমান হোসেন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরের ইস্কাটন নেভি কলোনিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নিজের বক্তব্যে নাহিদ বলেন, ‘আজ কিছু রাজনৈতিক দল জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে। তারা জনগণের স্বার্থ নয়, বরং নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার স্বার্থে ঐক্যের নামে প্রতারণা চালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে দিনে কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে, সেই দিনে জাতীয় শ্রমিক শক্তি রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। আমরা জানি, রাজপথের শক্তি সবসময় জয়ী হয়। ইনশাআল্লাহ, জাতীয় শ্রমিক শক্তিও জয়ী হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে।’
রাজনৈতিক দলের ঐক্যকে জাতীয় ঐক্য হিসেবে দেখার প্রবণতাকে ভুল উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য তখনই হয়, যখন সমাজের সব অংশের মানুষ দেশপ্রেমের ভিত্তিতে এক হয়ে লড়াই করে। সেটা আমরা দেখেছিলাম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে—সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার ছিল না, ছিল কেবল ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের ঐক্য। আমরা সেই ঐক্যের ধারাবাহিকতায় এগোচ্ছি, যেখানে ছাত্র ও শ্রমিক একসঙ্গে লড়াই করবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “বিগত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন শ্রমিকরা। ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলনে নেমে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠিত হলেও শ্রম কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়েও আলাপ দেখা যায়নি। মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত সেবামূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে—সেখানে গণতন্ত্রের কোনো ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে না।”
তিনি ঘোষণা দেন, গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক রূপান্তরের লড়াইয়েও ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাবে।
একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, “যেসব মাফিয়া দীর্ঘদিন শ্রমিকদের শোষণ ও লুটপাট করেছে, তাদের আজও বিচারের আওতায় আনা হয়নি, বরং বিভিন্নভাবে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “জাতীয় শ্রমিক শক্তি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের প্রতি অসম্মানের মনোভাব চলছে—রাষ্ট্রীয়ভাবেও সেই বৈষম্য বহাল আছে।”
শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বলেন, “বিগত কয়েক বছরে হাজারো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে, কিন্তু তাদের হত্যার বিচার হয়নি। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নও সেই লক্ষ্যেরই অংশ।”