ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইউনূসকে শক্ত হাতে হাল ধরার আহ্বান

* ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের এ অর্জন মেনে নিতে পারছে না : মান্না * মাঝনদীতে মাঝি বদলাতে হয় না। ড. ইউনূসের ওপর সবাই আস্থা রাখতে চায় : সাইফুল হক * ইউনূস দায়িত্ব ছেড়ে দেন এখন, তাহলে নির্বাচন, সংস্কার সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে যাবে : মঞ্জু * সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেই ড. ইউনূসকে যেতে হবে : সাকী
ইউনূসকে শক্ত হাতে হাল ধরার আহ্বান

জুলাই ঘোষণাপত্র, সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপের ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির পর দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় বাসভবন যমুনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে প্রায় সব রাজনৈতিক দল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থা রাখছে। এমন অবস্থায় ড. ইউনূসকে পদত্যাগের কথা চিন্তা না করে শক্ত হাতে হাল ধরার আহ্বান জানান দলগুলোর নেতারা।

রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবিক করিডর ইস্যুসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের এ অর্জন মেনে নিতে পারছে না। পারলে একদিনে তা ধ্বংস করে দেবে। এটা যাতে কোনোভাবেই না হয়, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গত ক’দিনের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার মন খারাপ ছিল। এজন্য তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মাঝনদীতে মাঝি বদলাতে হয় না। এজন্য ড. ইউনূসের ওপর সবাই আস্থা রাখাতে চায় বলে তাকে জানানো হয়েছে। সাইফুল হক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার দলনিরপেক্ষ অবস্থা বজায় রাখতে পারছে না। এটি পরিহার করে নিরপেক্ষ আচরণ দেখতে চাই। এক সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার দেখতে চাই না। মানবিক করিডরসহ জাতীয় কোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া নেওয়া উচিত নয় বলে আমরা বৈঠকে জানিয়েছি।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ পাবেন না বলে ধারণা করেছিলেন। তাই তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। নির্বাচনের জন্য একটু শক্তিশালী প্রশাসন দরকার, সেটি প্রস্তুত হলেই নির্বাচন আয়োজন হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন। মুজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেছি আপনি যদি দায়িত্ব ছেড়ে দেন এখন, তাহলে নির্বাচন, সংস্কার সবকিছু অনিশ্চিত হয়ে যাবে। জাতি দিশাহারা হয়ে যাবে।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে থেকে গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মতের পার্থক্য থাকবে এটা মেনে নিতে হবে, কিন্তু কোনটা কার্যকর হবে সেটা ঠিক করবে জনগণ। সেলিম বলেন, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার দরকার, তা করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সময়ক্ষেপণ করলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে, তখন কিছু করার থাকবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেই তাকে (ড. ইউনূস) যেতে হবে। নানা ধরনের অনাস্থা তৈরি হচ্ছে, এরমধ্য দিয়ে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এই জায়গাটা দূর করতে হবে বলেও তিনি বৈঠকে জানিয়েছেন। জনগণ দৃশ্যমান বিচার দেখতে চায়। বিচারের আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারেও দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেন সাকী। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, এটা যে জরুরি তা সরকারও মনে করে। তবে, নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, যে প্রতিষ্ঠানগুলো জড়িত, সে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন আত্মবিশ্বাসী হবেন যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত, তখনই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ছাত্র প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টাকে অপসারণ করা বা তাদের বুঝিয়ে পদত্যাগের দিকে যাওয়ার জন্য সরকারকে বলেছেন তিনি। নুরুল হক নূর বলেন, আমাদের আন্দোলনকারী ছাত্র নেতৃত্বের মধ্যে যারা উপদেষ্টা রয়েছেন, তারা যেহেতু একটি দল করেছেন, বাইরে এ কথাটি প্রচলিত আছে যে, এই দলটি সরকারের সুবিধা পাচ্ছে এবং সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনসিপির দুইজনকে অপসারণ করা বা তাদের বুঝিয়ে পদত্যাগের দিকে যাওয়া সরকারের দিক থেকে একটি ভালো দিক হবে।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান ভূঁইয়া (মঞ্জু), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। ইসলামি বক্তা সাদিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।

প্রসঙ্গত, নানা ক্ষোভ ও হতাশা থেকে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের গুঞ্জনে’ গত বৃহস্পতিবার থেকে সব মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। গত শনিবার রাতে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে তিন দল তাদের অবস্থা তুলে ধরে। বৈঠকে বিএনপি বলেছে, তাদের প্রত্যাশিত সময় ডিসেম্বরের মধ্যে যে নির্বাচন হবে, সেই প্রতিশ্রুতি তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পায়নি। জামায়াত নির্বাচনের সঙ্গে সংস্কারের পথনকশা চাইলেও কোনো সময়ের কথা বলেনি। তবে তারা আগের মতোই নির্বাচনের আগে সংস্কারের ভাবনা জানিয়ে এসেছে। অন্যদিকে এনসিপি বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের সঙ্গে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে এসেছে। বলেছে, আওয়ামী লীগের সময়ের সব নির্বাচন আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

ভারতীয় আধিপত্যবাদ,জুলাই ঘোষণাপত্র,জাতীয় নির্বাচন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত