ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নয়া কৌশল বিএনপির

নয়া কৌশল বিএনপির

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে দলটি। সবশেষ গত শনিবার রাতেও একই দাবিতে বৈঠক করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এ দাবির সঙ্গে আরও একটি দাবি যোগ হয়েছে তা হলো- তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ। এসব দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পায়নি বিএনপি। এতে দলটির নেতাকর্মীরা অনেকটা হতাশ। তবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি আদায় করতে না পারায় বিএনপি এবার নয়া কৌশলে এগোচ্ছে। আসন্ন কোরবানির ঈদের পর দলটি দাবি আদায়ে নুতন কর্মসূচি দিবে বলে জানা গেছে। তখনও যদি সরকার সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না করে তাহলে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি।

এদিকে গত কয়েক দিন ধরে ড. ইউনূসের পদত্যাগ করার ভাবনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর রাজনীতির ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ নিয়েও বিএনপি সতর্ক রয়েছে। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা ড. ইউনূসের পদত্যাগ চান না। বরং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সুন্দর সমাধানের লক্ষ্যে গত শনিবার বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পায়নি বিএনপি। নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্য সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘স্পেসিফিক কোনো রকমের এরকম কথা হয়নি, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) স্পেসিফিক কিছু জানাননি। আমরা আমাদের দাবিগুলো ওনাকে লিখিতভাবে জানিয়ে এসেছি। হয়তোবা ওনারা প্রেসের মাধ্যমে জানাবেন।’

আপনারা আলোচনায় সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘এখনই প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নেই। ওনারা প্রেস প্রতিক্রিয়া জানালে আমরা পরে জানাব।’

প্রতিনিধিদলের নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের আলোচনার মধ্যে আসছে সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। আমরা বলেছি, একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক নেই।’ তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচরের জন্য দ্রুত রোডম্যাপ প্রণয়নের দাবি আমরা জানিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।’

হঠাৎ রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের ইঙ্গিত, আগামী নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও সরকার যাতে বিব্রত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। বরং দলটির নীতিনির্ধারকদের আশা, নির্বাচন নিয়ে সরকার দ্রুতই সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে ড. ইউনূস সম্মানজনক বিদায় নেবেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের জন্য সরকারকে চাপে রাখলেও বিএনপি চায় না তাদের কোনো কার্যক্রম ঘিরে দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। নেতারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন, সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচার ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাবে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, টানা এক সপ্তাহ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সরকারকে বার্তা দিতে চেয়েছে দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ‘তালবাহানা’ হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে তাও বোঝানোর চেষ্টা করেছে বিএনপি। জানা গেছে, রাজপথে এমন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা বিএনপির সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, তারা এই সরকারকে কোনোভাবেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চায় না।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি আরও কিছুদিন নানা ফোরামে তুলে ধরতে চায়। আসছে ঈদুল আজহার পর তাদের দলটির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও নির্বাচনের জোরালো দাবি তুলে ধরা হবে। সরকার আন্তরিক হলে আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট করবে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা।

সবশেষ গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা কমপক্ষে আরও দুই মাস সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়ের পরে নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে কিংবা নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হলে তখন রাজপথের কর্মসূচির কথা ভাববে বিএনপি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পেছনে কারও একার কৃতিত্ব নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আগামীর ঐক্য হবে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য। আগামীতে দেশের মানুষের জন্য দায়বদ্ধ সরকার দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা যদি বলি যে, আগামীকাল রাস্তায় নামব, তাহলে মনে হয় ড. ইউনূস ২৪ ঘণ্টাও থাকতে পারবেন না। কিন্তু, আমরা চাই ড. ইউনূস সফল হোক। ওনার সফল মানেই হলো, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সফলতা। আজকে যারা জুলাই আন্দোলনের মুকুট চায়, তাদের তো মুকুট অনেক আগেই দেয়া হয়েছে। আমরাও দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত সচিবালয়ে প্রবেশ করিনি। কিন্তু, ওনারা (বৈষম্যবিরোধী নেতারা) এত ঘন ঘন সচিবালয়ে যায় কেন, ডিসি অফিসে যায় কেন। আজকে যে জাতি তাদের মাথায় তুলেছে, সেই মাথা থেকে যদি পায়ের তলায় পড়ে যায় সেটার জন্য কি জাতি দায়ী?

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে ভালো নির্বাচন হবে, এটা আমাদের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামি দলগুলো ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার পতন চেয়েছে একটি মাত্র কারণে, তা হচ্ছে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য। এটা ছিল গত ১৫ বছরের লড়াই, সেই লড়াইয়ের পরে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। হাসিনার পতন মানে স্বৈরতন্ত্রের পতন, হাসিনার পতন মানে ফ্যাসিবাদের পতন, গণতন্ত্র বিজয় লাভ করেছে। এখন সে গণতন্ত্র উত্তরণের দরকার, উত্তরণ মনে নির্বাচন।

বিএনপি,শেখ হাসিনা,অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত