ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাপ মোচনের উপায়

মাহদি হাসান
পাপ মোচনের উপায়

ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় আমরা বিভিন্ন পাপে জড়িয়ে যাই। অনেক সময় এক পাপ থেকে বাঁচতে গিয়ে অন্য পাপে পা পিছলে পড়ি। কখনো ইচ্ছায় পাপে লিপ্ত হই, কখনও অনিচ্ছায়। কখনও বুঝতে পারি। কখনও বুঝতে পারি না। তখন একের পর এক পাপে জড়াতেই থাকি। এতে পাপের বোঝা দিন দিন ভারী হতে থাকে। কিছু গোনাহ থাকে অনেক বড় ও ভারী, যা তওবা ছাড়া মাফ হয় না। আর কিছু গোনাহ অবচেনভাবেই হয়ে যায়। এটাকে আরবিতে বলে সগিরা গোনাহ।

গোনাহ কবিরা বা সগিরা যাই হোক, এর পরিণাম ভালো না। এর কারণে দুনিয়ার জীবনে আসে বিপদাপদ, পরকালে ভোগ করতে হবে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি।

গোনাহ হয়ে গেলে দুনিয়া থাকা অবস্থায় তা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। কিন্তু এই পাপের বোঝা কীভাবে হালকা করা যায়, কীভাবে মেটানো যায়- তা নিয়ে অনেকেই ভাবি না। অথচ ইচ্ছা করলে পাপগুলো আমরা মিটিয়ে দিতে পারি তৎক্ষণাৎ। সেই পন্থা আল্লাহতায়ালা নিজে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। নেক কাজের মাধ্যমে পাপ মেটানোর কথা বলেছেন তিনি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তুমি নামাজ কায়েম করো দিবসের দুই প্রান্তভাগে এবং রজনীর প্রথমাংশে। অবশ্যই নেক আমল পাপগুলো মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ তাদের জন্য এক উপদেশ।’ (সুরা হুদ : ১১৪)।

কতই না সুন্দর পথ। একটি নেক কাজই পারে আমাদের পাপগুলো মিটিয়ে দিতে। রাসুল (সা.) আবু জর (রা.)-কে বলেন, ‘হে আবু যর, যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো এবং কোনো পাপ হয়ে গেলেই নেক আমল করো; তা তোমার পাপ মিটিয়ে দেবে।’ (তিরমিজি : ১৯৮৭)। এভাবেই পাপের কাফফারা হয় নেক আমল করার দ্বারা।

নেক কাজ নানাভাবে করা যেতে পারে। মানুষকে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আমরা নেকি অর্জন করতে পারি। চলতে-ফিরতে হরহামেশাই যেহেতু গোনাহের আশঙ্কায় থাকি, সর্বদাই গোনাহের জালে আবদ্ধ থাকি। তাই আমাদের সালাম একটি নেক কাজ। পথে বের হলেই আমরা পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তির মুখোমুখি হই। শুধু ছোট্ট করে একটি সালাম দিলেই হলো। দশটি নেকি আমাদের আমলনামায় জমা হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গোনাহের বোঝাও হালকা হলো। পাশাপাশি পরস্পর ভ্রাতৃত্ব আর মহব্বতের সেতুবন্ধও তৈরি হবে।

দান-সদকার মাধ্যমে নেক কাজ করতে পারি। অন্যকে সহযোগিতার মাধ্যমে করতে পারি। সর্বদা সত্য কথা বলার মাধ্যমে করতে পারি। সুযোগ হলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কারও কোনো পাপ হয়ে গেলে সে যদি উত্তমরূপে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চায়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২)। এভাবেই আমরা খুঁজে খুঁজে নেক কাজ করতে থাকলে আমাদের দ্বারা যদি কোনো গোনাহ হয়েও যায়, সেই নেক কাজগুলো গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

কেয়ামতের দিন যখন আমলনামা পাল্লায় তোলা হবে, আশা করা যায় আমাদের নেক আমলগুলো ছাড়িয়ে গোনাহের পাল্লা কিছুতেই ভারী হয়ে উঠতে পারবে না। এই ছোট ছোট নেক কাজগুলোই সেদিন পাহাড়সম হয়ে আমাদের নাজাতের উসিলা হবে। আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

পাপ মোচন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত