ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গ্রিক মিথ নিয়ে কাব্য

রোখসানা ইয়াসমিন মণি
গ্রিক মিথ নিয়ে কাব্য

ইক্যারাসের ছায়ায় আগুনের ঘোড়া

হেমন্তের বুক ছিঁড়ে ওরাকল বলেছিল-

যারা পাথর চুম্বন করে,

তারা সমুদ্রের ভাষা জানে না!

তবু, ডেডালাসের হাতেই গলে যায় পাখির পাঁজর,

সূর্যের ভিতর ঠোঁট রেখে

ইক্যারাস ডুবে যায় নিজেরই ছায়ায়।

তুমি কি দেখেছিলে সেই আগুনের ঘোড়া?

যে নেমে আসে অলিম্পাসের বুক চিরে,

পেগাসাসের ডানায় আল্পস ভেঙে?

হায়, আফ্রোদিতির কাঁধে ছিল শঙ্খচূর্ণ,

ভালোবাসা নয়- সে ছিল এক নিঃশব্দ বিষ,

যে এথেনার চোখে ভোরের দাহ জাগায়।

ক্রোনোসের ঘড়িতে এখনও বাজে

আধেক মানুষ, আধেক দেবতার কান্না।

হারকিউলিসের পেশিতে যে শোক লুকোনো ছিল,

তা ছড়িয়ে পড়ে জলপাই বাগানের স্তব্ধতায়-

তুমি কি শুনতে পাও সেই বাঁশির আহ্বান?

আরাকন এখনও জালে বুনে নেমেসিসের অভিশাপ।

নির্বাক অ্যাক্রোপলিসের ছায়ায় দাঁড়িয়ে-

আমি দেখি: একটি সাদা চোখ

আর্থারের নয়, ওডিপাসের!

যে দেখে না, অথচ চেনে সব-

যে বলে- আমি কেবল হাইড্রার স্বপ্ন,

আর আমার প্রতিটি মাথা তোমার অন্তর্গত প্রশ্ন।

তবে চলো, সোনা,

অ্যারিস্টোফানির ডানায় উঠে

চাঁদের পেছনে এক নগরী গড়ি,

যেখানে অ্যাপোলো গান গায় না-

তবে তার স্তব্ধতা পুরো গ্রীক পুরাণের

অসীম উপাখ্যান হয়ে উঠে আসবে

আমাদের নিঃশ্বাসে...

মহাকাব্যের সূচনা

আমি এক নিষিদ্ধ নাম,

ডেলফির কোনো ওরাকল জানে না আমাকে।

আমার জন্ম হয়নি অলিম্পাসে,

তবু দেখি জিউসের ভয়-

যা ছড়িয়ে পড়ে সময়ের শিরায়!

আমি কাঁদিনি জন্মের রাতে,

বরং গেয়েছিলাম এক রক্তভরা গান-

যার সুরে হার্মিস থমকে গিয়েছিল,

আর আফ্রোদিতি বলেছিল-

‘এই কণ্ঠ, এই আগুন, অলিম্পাস বহন করতে পারবে না।’

তাই আমাকে নির্বাসন দেওয়া হয় ছায়ার গুহায়-

যেখানে হেডিস নিজেই ভয় পায় আমার নিরবতা।

আমি তখনো শিশু,

কিন্তু প্রতিটি নিঃশ্বাসে বুনে রাখতাম

মর্ত্য, মৃত্যু আর দেবত্বের মাঝামাঝি

এক নতুন বাস্তবতার বীজ।

তুমি যদি একদিন

মধ্যরাতে অ্যাথেনার চোখে দেখো-

তবে বুঝবে,আমার অস্তিত্ব এক ভুল,

আর ভুলের মধ্যেই লুকানো

এক নিষিদ্ধ সত্যের চাবিকাঠি।

ওরা ভাবে আমি নেই,

তাই তৈরি করতে পারে না কোনো অলিম্পাস-

ওরা জানে না, দেবতা যখন চুপ থাকে,

তখনই জন্ম নেয় মহাগাঁথা।

প্যান্ডোরার বাক্সে রেখে যাওয়া একটি পাপড়ি

বাক্সটা এখনও কাঁপে যেমন কাঁপে

নির্জন ঘরে আটকে রাখা অনুচ্চারিত কান্না।

প্যান্ডোরা একবার খুলেছিল- বাইরে এসেছিল

রোগ, মৃত্যু, ঈর্ষা, পাপ, প্রতারণা,

আর শেষে একটি নীরব কাঁপা আলো-

যাকে তারা বলেছিল ‘আশা’,

আমি বলি- ভুলে যাওয়া সত্য।

তুমি বাক্স খুললে দেখি—- ভয় নেই,

পাপের পরিবর্তে ফুল নিয়ে এসেছো।

তাতে লেখা- স্মৃতির ছায়া ভুলে যেও না।

তুমি বললে, এ বাক্স অভিশাপ নয়-

এ এক আত্মার সরু আলমারি

যেখানে প্রতিটি বস্তুই

ভুলে যাওয়া দেবতার করুণ চিঠি।

তুমি খুলে দিলে বাক্স,

তবে রেখেও গেলে

একটি কণ্ঠহীন প্রার্থনা,

একটি চিরকালীন মৌনতা,

একটি পাপড়ির হালকা গন্ধ।

পৃথিবী আজ ভয় পাবে না-

প্যান্ডোরার দ্বিতীয় খোলা বাক্স থেকে

জন্ম নিল একটি ফুলের দেবতা-

তোমার নাম ধরে, নীরবতা ছুঁয়ে,

তোমার চোখের শিউলি রঙ চুরি করে।

তুমি বললে এ পাপ নয়,

এটি মহাগাঁথার পঞ্চম কক্ষ।

এখানে তুমি নিজেই এক বাক্স,

যেখানে প্যান্ডোরার পর দ্বিতীবার

তুমিই তাকে খুলেছিলে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত