ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভাপ ওঠা ভাত

রাশেদ রহমান
ভাপ ওঠা ভাত

তখনো ভোরের আজান হয়নি। রাত-রাত ভাবটা রয়েই গেছে। বাড়ির পেছনে সরকারবাড়ির বাঁশঝাড়ে অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির। শালিক, ময়না, দোয়েল, চড়ুই পাখিই বেশি। কাকের কাণ্ডকা শব্দও আছে। এইসব পাখির ডাকাডাকিতেই বোঝা যায়- ভোর হয়ে এলো বলে। ময়নার মা আরো আগে ঘুম থেকে উঠেছে। এমনিতেই তার পাতলা ঘুম। ক্ষুধা পেটে ঘুম তো আসতেও চায় না। জোর করে চোখ বুজে মড়ার মতো পড়ে থাকাই সার! প্রাতকৃত্য সেরে হাতমুখ ধুয়ে সে বাইরে বেরোনোর জন্য তৈরি হচ্ছে। দুদিন ভোটঘরে গিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছে। তার নাম ডাকার আগেই, লাইনে তার সামনে আরো ১০ থেকে ১২ জন ছিল- চাল, ডাল, আলু-পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল- যা ছিল সব শেষ। টিসিবির ট্রাক খালি, শুধু ময়নার মা কেন- আরো শতেক মহিলাকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। পুরুষ-মানুষও কেউ-কেউ খালি হাতে ফিরেছে। আজ আবার টিসিবির ট্রাক আসবে ভোটঘরে। সপ্তাহে একদিন আসে। আগেভাগে গিয়ে, আজ যে-করেই হোক লাইনের সামনের দিকে দাঁড়াতে হবে। কোত্থেকে যে এত মানুষ আসে! কয়েকশ’ কার্ড দিয়েছে ইউনিয়নে? গরিব মানুষই বা কত? টিসিবির কার্ড পেতে আলিম মেম্বারকে, যে কি না আবার সরকারিদলের নেতাও, তাকে ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে।

মাস কাবার হয়ে এলো, ময়নার মা একদিনও চাল-ডাল পেল না। সবাই তাকে কনুই মেরে পেছনে ফেলে লাইনের সামনে চলে যায়...।

ময়নার বাপ জাগনা পাইছ...?

ঘুমাইলে তো জাগনা পামু...?

পেটে ক্ষুধা থাকলে কারই বা ঘুম আসে। ময়নার মায়ের যেমন ঘুম আসে না, সারারাত এপাশ-ওপাশ করে; ময়নার বাবার চোখেও ঘুম আসে না। সেও সারারাত এপাশ-ওপাশ করে। চোখে কখনো হয়তো একটু তন্দ্রার মতো আসে, চোখের পাতা একটু ভারী হয়, আর তখনই আবছা-আবছা স্বপ্ন দেখে- ভাতের স্বপ্ন। ময়নার মা, ছোট দুই মেয়ে শেফালি আর বকুলকে নিয়ে গোল হয়ে বসে। গামলায় ভাপ ওঠা গরম ভাত, পুঁটি মাছ ভাজা, কচু ভর্তা, পিয়ালি মাছের তরকারি; সবাই মিলে পেটপুরে ভাত খায়। ময়নার বাবা রহমত আলি খাওয়া শেষে আয়েশ করে ঢেঁকুর তোলে। ছেলেটা, রতন, সবার ছোট, বয়স দেড় বছরের মতো, ভাত খাওয়া শেখেনি, তবুও সে সবার সঙ্গে বসে, গরম ভাতের গামলায় হাত দিতে যায়, ময়নার মা হায় হায় করে ওঠে; রহমত খাওয়া শেষ করে বারান্দায় বসে হুঁকো টানে। একটা সময় ছিল, গাঁয়ে-ঘরে সবার বাড়িতেই হুঁকো ছিল, আইলায় আগুন থাকত, তামাকের ডিব্বা থাকত, অতিথি কি প্রতিবেশী কেউ এলে হুঁকো সাজিয়ে দিতো, এখন প্রায় কোনো বাড়িতেই হুঁকো নেই, বিড়ি-সিগারেটের চল এসেছে। বিড়িও কম, সবার পকেটেই, যারা ধূমপানে অভ্যস্ত, তাদের পকেটে সিগারেটের প্যাকেট থাকে। কিন্তু রহমত আলীর বাড়িতে এখনো হুঁকো, আইলা, তামাকের ব্যবস্থা আছে। রহমত স্বপ্নের ভেতরেই ভাত খাওয়া শেষে হুঁকো সাজিয়ে বসে...।

এই যে তন্দ্রার মধ্যে ভাপ ওঠা ভাতের স্বপ্ন দেখা, রহমত আলীর এটা একটা রোগের মতো হয়ে গেছে, প্রত্যেক রাতেই সে এই স্বপ্ন দেখে এবং তন্দ্রা কেটে যাওয়ার পর স্বপ্ন অপসৃত হয়ে গেলে রহমতের শরীরে কাঁপন শুরু হয়ে যায়। সে আলগোছে, ময়নার মা কিংবা ছেলেমেয়েরা যাতে টের না পায়, সে উঠে বসে। ঘরের বাইরে যায়। রহমতের বাড়ির পেছনে সরকারবাড়ির বাঁশঝাড়, কিন্তু সামনে খোলা। খোলা চক। প্রচুর বাতাস চকে। রহমতের গা জুড়িয়ে যায়। অনেকক্ষণ কামরাঙা গাছের নিচে পাতা মাচালের ওপর বসে থাকে। আস্তে-আস্তে স্বপ্নের ঘোর কেটে যায়। আবার চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে...।

ভাপ-ওঠা ভাতের স্বপ্ন প্রায় প্রতিরাতেই ময়নার মাও দেখে। কিন্তু সে তা স্বামী কি অন্য কারো কাছে যেমন প্রকাশ করে না, রহমত আলীও স্বপ্নের কথা স্ত্রী কি কারো কাছে প্রকাশ করে না। এটা যেন কোনো গোপন রোগ। প্রকাশ পেলে সর্বনাশ! কোথাও মুখ দেখানো যাবে না...।

পাঁচণ্ডসাত বছর আগেও, যে-বছর বড় মেয়ে ময়নার বিয়ে দিলো- পরিস্থিতি এরকম ছিল না। বিয়ের দিন মোটামুটি ধুমধাম করেছিল বাড়িতে। দিনমজুরির টাকা জমিয়েই তো বিয়ে দিলো মেয়ের। আর এখন মেয়েদের খেতেই দিতে পারে না। ছোট ছেলের জন্য একটু দুধ কেনা তো দুঃস্বপ্নের মতো। শেফালিটার খাওয়ার প্রতি একটু ঝোঁক বেশি। পেট পুরে খেতে না পেয়ে মেয়েটা কেমন পাটকাঠির মতো শুকিয়ে যাচ্ছে। তখন চাল ছিল ৩০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ৭০ টাকা। আর এখন! কোনো জিনিসে হাত দেওয়া যায় না। চালের কেজি ৬০ টাকা, ডালের কেজি ২০০ টাকা। পেঁয়াজ-মরিচ, যা দুদিন ঘরে থাকলেই পচে যায়, তারও দাম কত? দুশো-আড়াইশ’ টাকা কেজিতেও মেলে না। এক কেজি শিমের দাম ১৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শের কেজি ১০০ টাকা, একটা চালকুমড়োর দাম ১৫০ টাকা; চাল-ডাল, তরিতরকারি, শাক-সবজির দাম ছয় মাসের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে গেল; একহালি ডিমের দাম ৬০ টাকা; রোগীর পথ্য ডাব, পোয়াখানেক পানি ভেতরে থাকলেই তার দাম ১৪০ কি, ১৫০ টাকা। মানুষ কী খেয়ে বাঁচে...?

সব জিনিসের দাম বেড়েছে, তা ঠিক। তারপরও বেঁচে থাকার একটা উপায় হতো কিন্তু তার কোমরের ব্যথাটাই তাকে মেরে ফেললো। ঠিকমতো কাজ করতে পারলে, মজুর খাটলে কি রিকশা চালাতে পারলে প্রতিদিন, এতটা দুর্গতি নামতে পারতো না তার সংসারে। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না, গোটাকয়েক ব্যথার বড়ি যে কিনে খাবে রহমত আলীর সেই সামর্থ্যও নেই। চিকিৎসা ছাড়া কি রোগ ভালো হবে...?

রহমত আলীকে যে কোমরের ব্যথায় ধরেছে, আক্রমণটাও খুবই মারাত্মক, ব্যথা যখন ওঠে, তখন শুয়ে-বসে কি দাঁড়িয়ে, কোনোভাবেই ব্যথা কমে না, যেন সহ্যের অতীত; পাঁচ বছর অন্তত হবে এই ব্যথার উপদ্রব শুরু হয়েছে, রিকশা অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকেই। রহমত আলী শহরে রিকশা চালাতো, সে শুধু একা না, গাঁয়ের তার বয়সী হুরমুজ, কুদরত, জাবেদ, নূর মোহাম্মদণ্ড আরো অনেকেই রিকশা চালাতো শহরে। দুপুরের পরপর শহরে যেত, আলিমুদ্দি সিকদারের গ্যারেজের রিকশা, রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে রাতে সবাই একসঙ্গে বাড়ি ফিরত। আয়-রোজগার নেহায়েত মন্দ হতো না, নিজের খাই-খরচা, মালিকের ভাড়া মিটিয়ে একদিনে যা থাকত, তাতে সংসারের দুদিনের খরচ অনায়াসে উঠে যেত, অর্থাৎ সঞ্চয় থাকত ভালোই। রহমত আলি, হুরমুজ, কুদরত- তিনজনেই রিকশা চালানোর সঞ্চয় দিয়ে যার যার মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। জাবেদ আর নূর মোহাম্মদের বিয়ের যুগ্যি মেয়ে নেই, ওরা দুজনে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে রেহানে জমি রেখেছে, তাতে প্রায় ছয় মাসের খোরাকি ধান উঠে আসে। বলতে হয়- ওদের সংসারে তেমন অভাব ছিল না কখনোই, রহমত বাদে অন্য সবার এখনো, চাল-ডাল, তেল-আলু, পেঁয়াজ-মরিচ, দুধ-দই, মাছ-মাংস, কাপড়-চোপড়, ওষুধপথ্য- সবকিছুর দাম বেড়েছে, কোনোটার দাম দ্বিগুণ, কোনোটার দাম তিন-চারগুণ হয়েছে, তবু কষ্ট করে হলেও তাদের দিন চলে যায়। কেউই রহমত আলীর মতো অথই সাগরে পড়েনি। সেও সাগরে হাবুডুবু খেত না- এভাবে অ্যাক্সিডেন্টে পড়ে কোমরটা অকেজো হয়ে না গেলে...।

সেদিন সন্ধ্যায়, বলতে গেলে তখনও সন্ধ্যা তেমন করে নামেনি, রহমত আলি কেবলই রিকশায় হারিকেন জ্বালিয়েছে, মাগরিবের আজান হয়েছে একটু আগে, রহমতের রিকশায় তখন যাত্রী নেই, কালীবাড়ি মোড় থেকে খালি রিকশা নিয়ে পুরনো বাসস্ট্যান্ডে মার্কেট ঘেঁষে রিকশা থামিয়ে, রিকশার সিটে বসে বিড়ি ধরিয়ে টানছিল; স্ট্যান্ডে তেমন রিকশা নেই, যানজটও নেই, আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করছে, এরই মধ্যে দৈত্যের মতো একটি বাস আসছিল ঢাকা থেকে, ট্রাফিক মোড় ঘোরার সময় বাসটি সজোরে ধাক্কা মারে রহমতের রিকশার পেছনে। রহমতের রিকশাটি গুঁড়িয়ে যায়, সে ছিটকে পড়ে রাস্তার ওপর। তার মা বোধহয় লাউয়ের পাতা বিলিয়েছিল তাই সে বেঁচে যায়; কিন্তু সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা...।

ওরা পাঁচজনেই একই গ্যারেজের রিকশা চালায়। রাতে একসঙ্গে বাড়ি ফেরে। রাতে যে যখনই রিকশা গ্যারেজে জমা দিক না কেন, সাড়ে দশটা-পৌনে এগারোটার মধ্যেই নতুন বাসস্ট্যান্ডে একত্রিত হয়। তারপর যমুনা সেতুর বাসে উঠে বাড়ি। রাত ১১টায় সেতুর শেষ গাড়ি ছাড়ে। কিন্তু সেদিন সাড়ে দশটা, পৌনে এগারোটা, এগারোটা বেজে গেল, সেতুর শেষ গাড়ি বারবার হুইসেল বাজাচ্ছে, সে এখনই ছেড়ে দেবে, এই বাস ধরতে না পারলে সিএনজিচালিত অটোতে বাড়ি যেতে হবে, ভাড়া তিনগুণ, কিন্তু রহমত আলির খবর নেই। সে আজ এত দেরি করছে কেন? খেপ নিয়ে কতদূর গেছে? কোনো বিপদণ্ডআপদ হয়নি তো? চারদিকে যেভাবে রিকশা-অটোরিকশা ছিনতাই হচ্ছে! যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা খুবই ভয়ংকর। নিবিই যখন, রিকশা নিয়ে চলে যা। কিন্তু ওরা তা করে না। গলা কেটে চালককে খুন করে, সাক্ষী রাখে না; যেন তাদের কেউ খুঁজে বের করতে না পারে...।

রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। কুদরত জাবেদকে উদ্দেশ করে বললো- একবার ফোন করে দ্যাখ দেখি...। তাই তো! আরো আগেই ফোন দেওয়া উচিত ছিল। বললো জাবেদ। তারপর জাবেদ কোমরে গুঁজে রাখা ফোন বের করে রহমতের নম্বরে ফোন করলো। ফোন বন্ধ। ‘দুঃখিত, আপনি যে নম্বরে কল করেছেন তা এখন বন্ধ রয়েছে। অনুগ্রহপূর্বক কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন।’ জাবেদ বললো- ফোন তো বন্ধ। রিং ঢুকে না...!

তাইলে...?

নও গেরেজে যাই। দেহি, আলিমুদ্দি বাই কিছু জানে কি না...?

ওরা চারজন আলিমুদ্দি সিকদারের গ্যারেজের দিকে হাঁটা শুরু করলো। পাঞ্জাপাড়া গ্যারেজ...।

আলিমুদ্দিও গ্যারেজে অপেক্ষা করছিল, সবাই রিকশা জমা দিয়ে গেছে, রাত বারোটা বেজে এলো, রহমত এখনো কেন আসছে না; সে এলেই গ্যারেজে তালা দিতে পারে। রহমতের জন্য অপেক্ষা করতে-করতে আলিমুদ্দির দারুর বোতল শেষ হয়ে গেছে। আর অপেক্ষা করা যায় না...।

সন্ধ্যার পর থেকেই, রাত কিছুটা ঘনিয়ে এলে, এই ধরুন আটটা কি সাড়ে আটটা বাজে; আলিমুদ্দি নিজের গদিতে বসেই দারুর বোতল খোলে। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে এক ঢোক, এক ঢোক করে দারু গলায় ঢালে আলিমুদ্দি। তার গ্যারেজে একশর ওপরে রিকশা। সুতরাং সহজ হিসাব, দুবেলায় দুশোর বেশি তার রিকশাচালক, সবাই জানে তাদের মালিক আলিমুদ্দি সন্ধ্যা নামার পর থেকেই দারু খায়, কিন্তু কোনোদিনই কেউ তাকে মাতাল হতে দেখেনি, সব রিকশার ভাড়া ঠিকঠাকমতো নিয়ে, খাতায় টাকা জমা করে, কেউ টাকা বাকি রাখলে সেটিও খাতায় তোলে, গ্যারেজে দামি চারটা তালা মেরে বাসায় যায়, সাড়ে এগারো কি বরোটার দিকে। কোনোদিন টাকা-পয়সার হিসাবে কোনো ব্যতিক্রম ঘটে না; সেদিনও সবার হিসাব ঠিকঠাকমতো খাতায় লিখে বসে আছে, দারুর বোতল খালি, কিছুই করার নেই, রাগে ফুঁসছে; তখনই কুদরত আলীরা চারজন গ্যারেজে ঢুকলো। ওদের দেখেই, আলিমুদ্দি যা কোনোদিন করে না, কোনো রিকশাওয়ালা যা কোনোদিন দেখেনি, হুরমুজ, কুদরত, জাবেদ, নূর মোহাম্মদ কি অন্য কেউ; আলিমুদ্দি সেদিন তাই করলো; খিস্তিখেউর শুরু করে দিলো; ওই কুত্তার বাচ্চারা, হারামির বাচ্চারা, তগোরো লিগা আমি সারা রাইত গ্যারেজে বইয়া থাকমু? রহমত কই? আমার ১০৩ নম্বর রিকশা কই...?

আলিমুদ্দি সেদিন মাতাল হয়েছিল তা ঠিক, কিন্তু রহমত আলি তার গ্যারেজের যে রিকশাটি চালায়, নম্বর ১০৩, রিকশার সেই নম্বর তার ঠিকই মনে আছে...।

আলিমুদ্দির মেজাজ দেখে ওরা ভয় পেয়ে গেল। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠলো। মালিকের আজ কী হয়েছে। মেজাজ এত গোলমরিচের মতো চড়া কেন...?

কুদরত আলি ভয়ে ভয়ে মিনমিন করে বললো- রহমত ভাইর তালাশেই তো আইলাম। আমরা সেই সাড়ে ১০টা থিকা বাসস্ট্যান্ডে বইয়া আছিলাম। তার খোঁজ নাই। ভাবলাম, আপনে যদি কিছু জানেন...?

থানায় গেছিলি...?

না। থানায় যামু ক্যা...!

হাসপাতালে...?

না। আমরা তার অপেক্ষায়, প্রত্যেক দিন যেরকম, আমাগোর কেউ আইতে দেরি করলে আমরা যেমন তার জন্য দেরি করি, আইজো, সেরকম, রহমত ভাইর জন্য দেরি করতাছিলাম...।

রহমত আলি ১০ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছুটি পায়। ছুটি তো পেল, হাতে-পায়ে কাটাছেঁড়া যা হয়েছিল, ঘা শুকিয়ে গেছে, কিন্তু বাসের ধাক্কায় নিজের রিকশার সিট থেকে ছিটকে পড়ে কোমরে যে-ব্যথা পেয়েছিল, এতদিনেও সেই ব্যথা আর ঠিক হলো না। রিকশা চালানো তো দূরস্থান, ভারী কোনো কাজই রহমত আলি করতে পারে না। বলা যায়, একরকম পঙ্গুই সে হয়েছে। সংসার চালায় ময়নার মা। কিন্তু কীভাবে চালায়, তা আর বলার মতো না।

(বাকি অংশ আগামী সপ্তাহে)

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত