ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রথম শহর স্থাপনের গল্প

ফারহান হাসনাত
প্রথম শহর স্থাপনের গল্প

আদম (আ.) পৃথিবীর প্রথম মানুষ, প্রথম সৃষ্টি। বিশ্বের ইতিহাসে মহান আল্লাহ আদম (আ.)-কে নিজ হাতে সরাসরি সৃষ্টি করেছেন। মাটির সব উপাদানের সার-নির্যাস একত্র করে আঠালো ও পোড়ামাটির মতো শুষ্ক মাটির তৈরি সুন্দরতম অবয়বে রুহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন। আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর তিনি জান্নাতে ছিলেন। সেখানে থেকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পর আল্লাহর বিশেষ হিকমতে তাকে তার স্ত্রীসহ এই পৃথিবীতে পাঠানো হয়।

আদম (আ.)-এর জীবন থেকে পৃথিবীর মানুষের জীবনের সৃষ্টি হয়েছে। তার সন্তানরা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। তারা নির্মাণ করেছেন বসবাস উপযোগী সুন্দর পৃথিবী। গড়ে তুলেছেন শহর-নগর, গ্রামগঞ্জ। আবিষ্কার করেছেন সময়োপযোগী উন্নত কলাকৌশল। নির্মাণ ও আবিষ্কারের প্রথমজনক ছিলেন আমাদের পিতা আদম (আ.)। তার চেতনার প্রজ্বলিত বিভায় পরবর্তী মানুষেরা আলোকিত হয়েছে। তিনি মানুষের প্রথম পিতা। আদম (আ.) যখন পৃথিবীতে আগমন করেন, তখন পৃথিবীর কোনো সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ ছিল না। বসতি ছিল না। জনপদ ছিল না। গ্রাম কিংবা শহরের স্মৃতিচিহ্ন ছিল না কোথাও। পাহাড়-বন-জঙ্গলে ভরপুর ছিল পৃথিবীর মাটি। আদম (আ.)-এর নাতি মাহলাইল ইবনে কায়নান পৃথিবীর বুকে প্রথম শহর স্থাপন করেন। তিনি এখানে অনেক ভালো কাজের সূচনা করেছিলেন। গাছ কেটে পরিবেশ তৈরি করেন। ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের খনি উত্তোলন করেন। ইবাদতগৃহ নির্মাণ করেন। শহর রক্ষায় বড় বড় দুর্গ নির্মাণ করেন। সাজানো-গোছানো পরিবেশবান্ধব দুটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। মানুষের চিরশত্রু ইবলিশ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের শহর থেকে বিতাড়িত করে জঙ্গল আর পাহাড়ে নির্বাসন দেন।

মাহলাইল ইবনে কায়নান পৃথিবীর সাত মহাদেশ শাসন করেন। তিনি সর্বপ্রথম লোহার ব্যবহার করেন এবং লোহা দিয়ে হাতিয়ার বানানোর সূচনা করেন। তার সময়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা ছিল না। তিনি সেসময় বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। মানুষকে কৃষিকাজে উৎসাহ দেন। জীবজন্তুর পশম দিয়ে কাপড় ও বিছানা তৈরি করেন। তিনি সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন করেন। ইতিহাসে তার নাম বিশাদ্দাদ পাওয়া যায়। বিশাদ্দাদ ফারসি শব্দ। অর্থ যিনি সর্বপ্রথম ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী। তিনি ৪০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। (আল কামিল ফিত তারিখু মুসান্নেফ, আল ইমাম ইবনুল আসির : ৫৩-৫৪ ) মাহলাইল দুটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন- বাবিল ও সোস। বাবিল বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত। পরবর্তী সময়ে সে জায়গায় কুফা নামক শহর প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সোস শহরটি ইরানের খুজেস্তানে অবস্থিত।

বিজ্ঞানের ধারণা মতে, সোস নামক প্রাচীন নগরটি এলাম সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত। খ্রিষ্টপূর্ব সাত হাজার থেকে এই অঞ্চলে মানুষের বসবাস- এমন প্রমাণ মিলেছে। সোস নগরীর ইতিহাস তিনটি যুগে বিভক্ত। ১. যখন প্রাচীনতম অধিবাসীরা বসবাস করত। ২. উরুক সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। ৩. যখন এই শহর এলাম সভ্যতার কেন্দ্র ছিল।

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা যাচ্ছে, নিউলিথিক যুগ তথা ৮৮০০-৭০০০ খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে বিবলসে মানুষের বসবাস শুরু হয়। খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে প্রথম বসতি গড়ে উঠেছিল এই শহরে। পুরাণ অনুযায়ী, ফোয়েনিসিয়ার প্রথম শহর হিসেবে ক্রোনাস তৈরি করেছিলেন এই বিবলস শহর। প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় এই বিবলস নগরী মুখ্য বাণিজ্য কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত হয়। সিডার ও অন্য মূল্যবান কাঠ রপ্তানি করত এই বাণিজ্য শহরের ব্যবসায়ীরা। ফোয়েনিসিয়ান বর্ণমালার প্রচলন এই শহরেই শুরু হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত