
আকাশে মেঘ আর নদীর পানির উচ্চতা বাড়লেই আতঙ্ক বাড়ে পায়রা নদীবেষ্টিত মির্জাগঞ্জ উপজেলাসহ পটুয়াখালী-বরগুনা উপকূল জুড়ে। সেই সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিপদ সংকেত আতঙ্কের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোঁ’তে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি কিংবা বঙ্গোপসাগরে কোনো নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, মির্জাগঞ্জ উপজেলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ। কারণ প্রায় প্রতি বছরই মৌসুমী জোঁ’র প্রভাবে এবং জলোচ্ছ্বাসের ফলে বেড়িবাঁধ ভেঙে অনেকগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়।
জানা যায়, এই উপজেলার মোট ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নই পায়রা নদীবেষ্টিত। আর এসব ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ গুলোর অবস্থা খুবই নাজুক ও নড়বড়ে। নেই কোনো ব্লোক ব্যবস্থা। সামান্য স্রোতেই যেকোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে এই অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। পায়রায় যেকোনো মুহূর্তে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে বসতভিটাসহ ফসলি জমি। অন্যদিকে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পায়রার বিরামহীন ভাঙন শুরু হয়। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটে এখানকার মানুষদের। কখন যেন পায়রার গ্রাসে শেষ সহায় সম্বলটুকু নদীতে চলে যায়। এদিকে হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার কাকড়াবুনিয়া বাজার ও গোলখালী স্লুইসগেট। এগুলো যেকোনো জলোচ্ছ্বাস কিংবা বর্ষা মৌসুমে পূর্ণিমার জোঁ’তে যেকোনো সময় স্রোতের তোপে দুমড়ে-মুচড়ে বিলিন হতে পারে পায়রার বুকে।
এভাবে প্রতি বছরই বঙ্গোপসাগরের লঘু চাপের সৃষ্টি হলে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় এবং বর্ষা মৌসুমে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয় পায়রা পাড়ের বসতিদের। আর বর্ষা শেষে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধে নামে মাত্র মাটি দিয়ে সংস্কারের নামে বরাদ্দ লুটপাট করে সংশ্লিষ্টরা- এমনই মন্তব্য করেন, বেড়িবাধ এলাকায় বসবাসকারীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, পায়রা নদীর বিরামহীন ভাঙনের মুখে দিনে দিনে ছোট হচ্ছে মির্জাগঞ্জের মানচিত্র। পায়রার তীব্র স্রোতে উপজেলার পিপঁড়াখালী শাহজাহান হাওলাদার বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি অরক্ষিত হওয়ায় বসতবাড়িসহ কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই ভাঙনের কবলে নদীর গর্ভে বিলিয়ে যাচ্ছে উপজেলার গোলাখালী, চরখালী, মেহিন্দাবাদ, কাকড়াবুনিয়া, ভয়াং, রামপুর, সন্তোসপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ। এরইমধ্যে পায়রা নদী গিলে নিয়েছে সুন্দ্রা কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামপুর দাখিল মাদ্রাসা।
আর এসমস্ত এলাকার বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষা এলেই ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ওই সমস্ত এলাকার ফসিল জমি ও ঘরবাড়ির। বেড়িবাঁধগুলোর এমনই দুরবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে যে, জলোচ্ছ্বাস তো দূরের কথা পায়রার দুই একটা ঢেউয়ের তোরেই যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। স্থানীয় আলী আকবর, ইমরান ও খালেকসহ উপজেলার বিভিন্ন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, মজবুত বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙতে ভাঙতে আমাদের যা ছিল সবই নদীতে গেছে। পায়রা নদীর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় আমাদের। এখন বেড়িবাঁধের যে অবস্থা তা বৃষ্টি আসলে জোয়ারের পানিতেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তখন মাথাগোঁজার মতো ঠাই টুকুও থাকবে না। প্রতিবছর শুনি ব্লোকসহ টেকসই বেড়িবাঁধ হবে কিন্তু বাস্তবে দেখা নেই। আমাদের একটাই দাবি ত্রান নয়, আমরা ব্লোকসহ টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
মির্জাগঞ্জের দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙাচুড়া ও দুর্বল অবস্থা। বড় ধরনের কোনো বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস হলে গরীব মানুষের বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ যাতে এই বাঁধগুলো শক্ত করে তৈরি করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, মির্জাগঞ্জে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে যায়, জনগণের ভোগান্তি হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করা হয়। ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাকিব বলেন, নিম্নচাপের কারণে যেসব এলাকা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে সেসব বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য সমীক্ষা প্রকল্প পাশ হয়েছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।