ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নওগাঁয় মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা

নওগাঁয় মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে সুবিধা পাচ্ছেন চাষিরা

কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁ। পাশাপাশি মৎস্যখাতেও এগিয়ে এ জেলা। সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেণু উৎপাদন করায় সুবিধা পাচ্ছে মাছ চাষিরা। তবে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এটি দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা যায়- ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০০ কেজি রেনু। যা থেকে রাজস্ব আয় হবে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া বিগত অর্থবছরগুলোতে আয় হয়েছে সন্তোষজনক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২২ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২০ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁয় অবস্থিত সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের আয়তন প্রায় ১১ একর। যেখানে সাড়ে ৪ একর জায়গায় রয়েছে ১০টি পুকুর। এসব পুকুরে কার্প জাতীয় মা মাছ- রুই, মৃগেল, কাতলা, কালবাউস ও পাঙ্গাসসহ অন্য মাছ চাষ করা হয়। যা থেকে উন্নত মানের রেনু উৎপাদন করে চাষিদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এ খামার থেকে বছরে ৫ মাস রেনু উৎপাদন হলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি খামারে রেনু উৎপাদন কম হওয়ায় বেসরকারি খামারের রেনু দিয়ে চাহিদা পূরণ করে মাছ চাষিরা। জেলায় ৩১টি বেসরকারি মৎস্য বীজ (হ্যাচারি) উৎপাদন খামার রয়েছে। যা থেকে বছরে প্রায় ১৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় রেনু উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলায় সরবরাহ করা হয়।

মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারগুলো মৎস্য চাষ, সরবরাহ এবং জনসাধারণের জন্য অনেকভাবে উপকারী। এই খামারগুলো উন্নতমানের পোনা সরবরাহ করে মৎস্য চাষিদের উপকৃত করে, যা মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

মাছ চাষিরা জানান- সরকারি খামারে তুলনামূলক রেনুর দাম কম ও মানে ভাল। তবে এ খামার থেকে চাহিদামতো রেনু না পাওয়ায় মাছ চাষিদের ভরসা বেসরকারি খামার। প্রতি কেজিতে অন্তত ৫০০-৯০০ টাকা বেশি দামে বেসরকারি খামার থেকে কার্প জাতীয় রেনু কিনতে হয়। তবে সরকারি খামারের রেনু থেকে গুণগত মানসম্পন্ন মাছ উৎপাদন হওয়ায় লাভবান চাষিরা।

সদর উপজেলার চকআবরশ গ্রামের মাছ চাষি মীর বকস বলেন- সরকারি খামারের রেনু উন্নতমানের। এ রেনু থেকে মাছ চাষ করলে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বেশি হয়। এতে দাম ভালো পাওয়া যায় এবং লাভবান হওয়া যায়।

দুবলহাটি গ্রামের আজিম উদ্দিন বলেন- সরকারি খামার থেকে কম দামে গুণগত মানসম্পন্ন ভালোমানের রেনু পাওয়া যায়। এ কারণে চাষিদের কাছে চাহিদাও বেশি থাকে। তাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হয়। যদি বেশি পরিমাণ উৎপাদন হতো তাহলে মাছ চাষিদের জন্য সুবিধা হতো। সরকারি খামার থেকে চাহিদা মতো রেনু না পাওয়ায় বাইরের বেসরকারি খামার থেকে বেশি দামে রেনু কিনতে হয়।

হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেন বলেন- এ খামারে খামার ব্যবস্থাপকসহ পদসংখ্যা রয়েছে ৫ জন। এরমধ্যে পাম্প অপারেটর ও অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। জনবল কম থাকায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। জনবল ও উপকরণ বাড়ানো গেলে আরও বেশি পরিমাণ রেনু উৎপাদন হবে এবং রাজস্ব বেশি আয় হতো।

মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মো. আব্দুল মান্নান বলেন- আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য গুণগত মানসম্পন্ন রেনু ও পোনা উৎপাদন করা। পাশাপাশি চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা এবং ভালোমানের পোনা সরবরাহ করা। এছাড়াও চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ চাষকৃত পুকুর পরিদর্শন করা হয়। এজন্য যে মাছের বৃদ্ধি কেমন হয়েছে পুকুর পরিদর্শন করলে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। তবে খামারে গবেষণা করে নতুন জাত সরবরাহ করা হলে চাষিরা আরও উপকৃত হবে।

তিনি বলেন- জেলায় বেশকিছু বেসরকারি মাছের খামার (হ্যাচিং) গড়ে উঠেছে। যা আমাদের বিভাগ থেকে তদারকি করা হয়। সরকারি এবং বেসরকারি হ্যাচারি মিলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছি বলে মনে করা হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলী বলেন- মা-বাবা মাছ যদি ভালো হয় তা থেকে উৎপাদিত রেনু ভালো হবে। পদ্মা ও যমুনাসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ভালো মানের মা মাছ সংগ্রহ করে রেনু উৎপাদন করা হয়। সরকারি খামার থেকে মাছ চাষিদের রেনু কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে ভালো রেনু পেয়ে চাষিরা লাভবান ও উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত