
চাঁদপুরের দুটি সেচ প্রকল্পসহ আট উপজেলায় আলু রোপণ ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষকরা জানিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গেল বছর আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক ওইসব জমিতে ধান আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন জেলা সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অধিকাংশ মাঠে দেখা গেছে আলু রোপণ কাজে কৃষকদের ব্যস্ততা। সকাল থেকেই মাঠে নামছেন কৃষকরা। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন, আবার অনেক কৃষক শ্রমিকদের নিয়ে আলু রোপণ করছেন। এভাবেই এখন দিন কাটছে কৃষকদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আলুর আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। এবছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ হেক্টর। তবে আবাদের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। এরইমধ্যে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। জেলার সবচাইতে বেশি আলু আবাদ হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। দ্বিতীয় অবস্থান রয়েছে কচুয়া এবং তৃতীয় অবস্থানে সদর উপজেলা। এই তিন উপজেলায় আবাদ হয় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর। সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দনপর্দি গ্রামের মাঠে পুরো দমে চলছে আলু রোপণ। এখানকার কৃষক ইসমাইল হোসেন ও সুরুজ মিয়া বলেন, আলু গেল বছর ভালো দাম পাইনি। তবে আমাদের জমিগুলোতে এ সময় আলু ছাড়া অন্য ফসল কম হয়। যে কারণে বাধ্য হয়ে আলু লাগতে হচ্ছে। ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানালেন তারা।
সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর, আশিকাটি, রামপুর, মৈশাদি, বালিয়া ও বাগাদী ইউনিয়নের উঁচু জমিতে শুরু হয়েছে আলু রোপণ। বাগাদি সোবহানপুর গ্রামের কৃষক শামছুল ইসলাম বলেন, আমরা এবছর আগাম আলু রোপণ শুরু করেছি। কারণ বৃষ্টি কিংবা কুয়াশার কারণে আলুর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। আগে উৎপাদন হলে ক্ষতির ঝুঁকি কমে।
এদিকে মতলব উত্তর উপজেলার উঁচু জমি, নদীর তীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে আগাম জাতের আলুর বীজ রোপণ। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে আলু রোপণের কার্যক্রম।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, কৃষকদের উচ্চফলন নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ, বীজ সংগ্রহে পরামর্শ, সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে মাঠপর্যায়ে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
মেঘনার পশ্চিমে বোরচর এলাকার কৃষক আমান উল্লাহ বলেন, এ বছর তিনি ১২ একর ২৫ শতাংশ জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এ এলাকার মাটি আলু আবাদের উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা আলু আবাদে ঝুঁকছেন। গত বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ক্ষতি হয়েছিল, তবে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো লাভের আশা করছেন তারা। চরাঞ্চলের কৃষক আলী আজ্জম, আলমগীর ব্যাপারী ও ওয়াসিম জানান, আগাম জাতের আলু চাষে শ্রম বেশি হলেও বাজারে প্রথম বিক্রি করলে লাভ বেশি। তাই তারা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে কাজ করছেন।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, অর্থকরী ফসল হিসেবে আলু চাষ এ এলাকায় অত্যন্ত লাভজনক। অধিকাংশ কৃষক এখন আলু চাষে স্বাবলম্বী। সেচ প্রকল্প এলাকায় আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে আছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আলুর বাম্পার উৎপাদনের আশা করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, এ বছর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার হেক্টর কমেছে। এর কারণ হচ্ছে গেল বছর আলুর ভালো দাম পায়নি কৃষক।
স্বাভাবিকভাবে যে কোনো ফসলের দাম ভালো পেলে কৃষকের ওই ফসলের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সমস্যা হলে আর আবাদ করে না। তবে আমার সঙ্গে কৃষকদের কথা হয়েছে। সদরের একজন কৃষক গেল বছর ১০ হেক্টরে আলু আবাদ করলেও এ বছর করেছে ৫ হেক্টরে। বাকি ৫ হেক্টরে তিনি বোরো ধানের আবাদ করবেন। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে এ বছরও আলুর ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি।