
কুষ্টিয়ায় বিজয়ের দিনে সন্তান থাকতেও এতিম বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এমন পঁচিশ মাকে নিয়ে নিজ সরকারি বাংলোতে এক অন্যরকম বিজয় দিবস উদযাপন করেছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ইকবাল হোসেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সরকারি ডাকবাংলায় মায়েদের ইচ্ছা অনুযায়ী একসাথে তাদেরকে নিয়ে নানা পদের খাবার খেয়েছেন। ইচ্ছেমতো খাবার খাওয়ানোর পর তাদের প্রত্যেকের গায়ে পরিয়ে দিয়েছেন নুতন শীতের চাদর।
এ সময় জেলা প্রশাসকের এমন আতিথিয়তা পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এসব মায়েরা। শেষ পর্যন্ত এক অন্যরকম আত্মতৃপ্তিতে নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে ফিরেছেন জীর্ণ শীর্ণ এসব মায়েরা। সরকারি কোষাগরের টাকায় নয়, নিজের বেতনের টাকা দিয়েই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এসব মায়েদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন।
জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের সাদ্দাম বাজার মোড় এলাকায় সার্কিট হাউজের সামনে উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের খোঁজ পান কুষ্টিয়ার নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন। খবর পেয়ে গত দুইদিন আগে ছুটে যান ওই বৃদ্ধাশ্রমে। জীর্ণ শীর্ণ বয়োবৃদ্ধ হতভাগা পঁচিশ মায়ের দুঃখ দুর্দশার চিত্র তিনি স্বচক্ষে অবলোকন করেন। সবার চোখে এক অনাকাঙ্খিত অশ্রুসিক্ত হাসি। শত কষ্টের মাঝেও জেলা প্রশাসককে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা। এ সময় মায়েদের কেউ জেলা প্রশাসকের কাছে গরুর মাংস, খাসির মাংস, মুরগির রোস্ট খেতে চান। আবার কেউ আবদার করেন বড় সাইজের ইলিশ মাছ ইলিশ মাছ খাওয়ানোর। শীতে কষ্টের কথাও জানান জেলা প্রশাসককে। বৃদ্ধা মায়েদের ইচ্ছের কথা বলেননি জেলা প্রশাসক।
তাই গত মঙ্গলবার দুপুরে একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজের সরকারি ডাক বাংলোয় বৃদ্ধা মায়েদের নিয়ে এসে জড়ো করেন জেলা প্রশাসক। তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী গরুর, খাসির মাংস, বড় সাইজের ইলিশ মাছ, মুরগির রোস্ট, দইসহ যে যেটা খেতে চেয়েছিলেন সেটাই খাওয়ানো হয়।
জানতে চাইলে উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ এতিম মা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকার ছারভানু বলেন, আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে এবং স্বামী কেউ বেঁচে নেই। এলাকার লোক এসে এই বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে গেছে। অনেকদিন আছি। জেলা প্রশাসক নয়, আমার কাছে মনে হয়েছে এ যেন সাক্ষাৎ এক ভগবান।
আমেনা খাতুন নামের আরেক মা জানান, গত দুইদিন আগে ডিসি স্যার নিজেই আমাদের এখানে কম্বল দিতে এসেছিলেম। তিনি সেদিন বলেছিলেন আপনারা কে কি খাবেন। আপনাদের আশা কি। আমরা একেকজন একেকটা খাবার খেতে চেয়েছিলাম। তিনি আজ আমাদের সবাইকে সাথে নিয়ে একসাথে খেয়েছেন। আমরা সবাই আত্মা ভরে খেয়েছি। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইফতিখার হোসেন মিঠু বলেন, ডিসি স্যার কম্বল দিতে এসে আমাদের এই ঝুপড়ি ঘরের বৃদ্ধাশ্রমের এসব মায়েদের দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি এসব মায়েদের কী কী খাওয়ার ইচ্ছা জানতে চান। তাদের ইচ্ছামতো ডিসি স্যার তার ডাকবাংলোই ডেকে নিয়ে তৃপ্তি ভরে খাওয়ান।