ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অতিদরিদ্রের নিম্নগামী হওয়ার হার ঠেকানো সম্ভব

অতিদরিদ্রের নিম্নগামী হওয়ার হার ঠেকানো সম্ভব

অর্থনীতিবিদদের মতো আমরা মনে করি, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টার পাশাপাশি সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা এবং এর আওতা বাড়ানো হলে অতিদরিদ্রের নিম্নগামী হওয়ার হার ঠেকানো সম্ভব হতে পারে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর দেশে চেপে বসেছিল হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা। মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই এই সময়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করেন। চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। অর্থনীতিতে এখনও স্বৈরশাসনের জের বহন করতে হচ্ছে। দেড় দশকে গুটিকয় অলিগার্ক দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করায় আমাদের অর্থনীতির এই হাল। সেই ধকল এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।

দেশের অর্থনীতি যে এখনও চাঙা হয়নি এর সর্বশেষ নজির বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন। অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এ বছর আরও ৩০ লাখ মানুষ ‘অতিদরিদ্র’ হতে পারে। ২০২২ সালের জনশুমারি অনুসারে, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সাল শেষে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা হতে পারে ১ কোটি ৫৮ লাখের মতো। আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা হতে পারে ৩ কোটি ৯০ লাখের মতো।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, মূলত তিন কারণে আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ক্রমাগত প্রকৃত আয় কমে যাওয়া; দুর্বল শ্রমবাজার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মন্থরগতি। তাই অতিদরিদ্রের হার বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২৪ সালে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রায় সব উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থার পূর্বাভাস, দেশে চলতি বছরে শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের প্রকৃত আয় কমতে পারে। আবার অতি দরিদ্র মানুষের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে। এতে বৈষম্য আরও বাড়তে পারে। তাই শুধু অতিদরিদ্রের হার নয়; জাতীয় দারিদ্র্যের হারও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা দিয়ে দরিদ্র মানুষ চিহ্নিত করা হয়। ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতিদরিদ্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে প্রতিটি দেশের জন্য নিজস্ব একটি দারিদ্র্যরেখা ঠিক করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যসীমার মানদ- হলো খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবা কিনতে একজন মানুষের প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজার ৮২২ টাকা খরচ করার সামর্থ্য যদি না থাকে, তাহলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন বা দরিদ্র হয়ে যাবেন। দেশে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি বাড়ছে না। এতে প্রকৃত আয় কমেছে সাধারণ মানুষের।

৩৯ মাস ধরে বাংলাদেশে মজুরির হার বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। তিন বছরের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রকৃত আয় কমে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা বিশাল জনগোষ্ঠী। অর্থনীতিবিদদের মতো আমরা মনে করি, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টার পাশাপাশি সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা এবং এর আওতা বাড়ানো হলে অতিদরিদ্রের নিম্নগামী হওয়ার হার ঠেকানো সম্ভব হতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত