ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট

ঘাটতি মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি করুন
শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সংকট

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি বছর গ্রীষ্মে চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে বাংলাদেশের আবহাওয়া। বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় শহরে এ সময় বসবাস কঠিন হয়ে পড়ে। অফিস আদালত এবং অবস্থাসম্পন্নরা তীব্র গরম থেকে বাঁচতে বাসায় গণহারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগাচ্ছেন। তাই শহরে বিদ্যুতের চাহিদা গ্রীষ্মে বিপুল হয়ে যায়। একইভাবে সারা দেশেও বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হয় এ মৌসুমে। বিগত সময়ে সরকার গ্রামে বেশি লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কৌশল নিত। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, অন্তর্বর্তী সরকার গ্রীষ্মে সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। সেজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে। এ জন্য গরম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ কমিয়েছে সরকার। এর প্রভাবে শিল্প খাতে উৎপাদন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। সংবাদমাধ্যমের খবর, পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা সবচেয়ে বেশি ঢাকার পাশে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে। দুই সপ্তাহ ধরে এসব এলাকার শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ বেশ কমে গেছে। সহযোগী একটি দৈনিক গাজীপুরের একটি কারখানার গ্যাস সরবরাহের চিত্র তুলে ধরেছে। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে কারখানায় ১০-১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ-ইঞ্চিতে চাপ) গ্যাস থাকতে হয়। ১৫ দিন ধরে দুই থেকে তিন পিএসআইয়ের বেশি গ্যাসের চাপ পাওয়া যায়নি। এতে কারখানাটির উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ কমে গেছে।

গাজীপুরে দুই হাজার ১৭৬টি কারখানা রয়েছে। এখানে গ্যাসের চাহিদা ৬০ কোটি ঘনফুট, পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ কোটি ঘনফুট। এ দিকে নারায়ণগঞ্জ শিল্পনগরীর একটি ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং কারখানায় উৎপাদন ৪০ টন, গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তা নেমে এসেছে ১০ টনে। এসব এলাকায় বস্ত্র, সিরামিক ও স্টিল কারখানাগুলো চাহিদার অনেক কম গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে পোশাক কারখানার উৎপাদন ৭০-৯০ শতাংশের মতো কমে গেছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়ে গ্যাস সংকট লাঘবে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় আবারও বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশে গ্যাসের মোট চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ রয়েছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। গ্রীষ্ম শুরু হওয়ায় শিল্প খাতে সরবরাহ কমিয়ে তা বিদ্যুৎ খাতে দেয়া হচ্ছে। যদিও বিদ্যুৎ খাতে অনেক বেশি ভর্তুকি দিয়ে সরকার গ্যাস সরবরাহ করে। বিদ্যুতের জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম নেয়া হয় ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। শিল্প থেকে নেয়া হয় এর দ্বিগুণেরও বেশি- ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকা। এদিকে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হলে পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানি খাত হুমকিতে পড়ে না। সরকার নাগরিকদের স্বস্তি দিতে বিদ্যুৎ খাতে গ্রীষ্মে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে আমরা নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারি না। তবে এজন্য শিল্প খাত অসুবিধায় পড়বে, সেটিও কাম্য নয়। তাই এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মোকাবিলা করা যেত। দুই কার্গো বাড়তি আমদানি করলে তীব্র গরমের মধ্যে বাড়তি চাহিদা মোকাবিলা করা যেত বলে জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্যাস ঘাটতি মোকাবিলা করতে হবে সরকারকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত