ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈদযাত্রা যেন না হয় ভোগান্তি এবং শোকের

জসিম মজুমদার
ঈদযাত্রা যেন না হয় ভোগান্তি এবং শোকের

বেশিরভাগ মানুষই জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হয়। কেউ একাকী শহরে আসেন আবার কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই পরিবার-পরিজন গ্রামে থাকে। মুসলমানদের দুটো বড় উৎসব একটি পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই এ দুই ঈদে সবাই তার পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। এ দুই ঈদের ছুটিতে যে শুধু মুসলমানরাই বাড়ি যান তেমন নয়। লম্বা ছুটি এবং অফিস-আদালত বন্ধ থাকার কারণে সকল ধর্মালম্বীর মানুষই বাড়িমুখী হন। যার কারণে যাত্রীদের ভিড় এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, একশ্রেণির পরিবহন ব্যবসায়ীরা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন। তারা বিভিন্ন অজুহাতে বাসভাড়া দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। তবে যাত্রীরা ভাড়ার চেয়েও যে সমস্যাটা বেশি সম্মুখীন হয় তা হলো জায়গায় জায়গায় ভোগান্তি। সময় মতো বাস কাউন্টারে আসে না।

পরিবার-পরিজন নিয়ে কাউন্টারগুলোতে জায়গা স্বল্পতার কারণে দাঁড়ানো সমস্যা, বর্ষার সিজনে এটি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। তারপর কিছু কিছু স্থানে রাস্তায় যানজটের কারণে মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। এসব যানজটের কারণে ড্রাইভাররা হয়ে যায় বেপরোয়া। রাস্তা একটু ফাঁকা পেলেই বেপরোয়া গাড়ি চালানো শুরু করেন। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান দেখলেই চোখে পড়ে। বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যান বাদই দিলাম।

গত ঈদুল ফিতরে একটা দীর্ঘ ছুটি থাকার ফলে মানুষ ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার পরও আমরা পরিসংখ্যান দেখলে বুঝতে পারি। গত পবিত্র ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ৩১৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত ৮২৬ জন আহত হয়েছেন।

একই সময়ে রেলপথে ২১টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত, আটজন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে চারটি দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত, একজন আহত ও একজন নিখোঁজ আছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৩৪০টি দুর্ঘটনায় ৩৫২ জন নিহত ও ৮৩৫ জন আহত হয়েছেন। বরাবরের মতো গত ঈদেও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। গত ঈদে ১৩৫টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫১ জন নিহত, ১৫৫ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, নিহতের ৪৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং আহতের ১৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ প্রায়। তারপরও দুর্ঘটনা রোধের কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। তার উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি কারণও রয়েছে। যেমন- দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল।

জাতীয় মহাসড়কে সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা। সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন। অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন। বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো। পাশাপাশি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা। যত্রতত্র রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যানজটের সৃষ্টি করাসহ আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এসব দুর্ঘটনারোধে সরকারিভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও। তা খুব একটা সুফল পাওয়া যায় না। পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের অসহযোগিতার কারণে। এ সব দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে হলে যত্রতত্র গাড়ি থামানো রোধ করতে হবে। দেখে শুনে গাড়ি চালাতে হবে। একজন ড্রাইভার নির্দিষ্ট সময়ের পর গাড়ি চালাতে পারবেন না আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

বেশির ভাগ ড্রাইভারই দুই তিন দিন টানা গাড়ি চালান যার কারণে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং মেজাজ থাকে খিটখিটে। যার কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। তাই পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের সতর্ক হতে হবে। একজন ড্রাইভার নিদিষ্ট সময়ের পর পর্যপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। পাশাপাশি যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা বন্ধ করতে হবে। যত্রতত্র থামার কারণে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয় এবং দুর্ঘটনাকবলিত হয়। সবাই যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে এবং ঈদ উদযাপন শেষে আবার শহরে ফিরে এসে তাদের কর্মজীবন শুরু করতে পারে। সে প্রত্যাশা রইল সকলের প্রতি, সবার ঈদযাত্রা শুভ হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত