ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ আবু সাঈদ

মো. জামাল উদ্দিন
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ আবু সাঈদ

বুক যেন তার খোলা আসমান, চিত্ত ভয়শূন্য। খোলা তলোয়ারের মতো ছড়িয়ে দেওয়া দু’হাত হয়ে উঠে মুক্তির প্রতীক। জুলাই আন্দোলনে নতুন স্ফুলিঙ্গ আবু সাঈদের সেই হাত। তার উঁচিয়ে দেওয়া হাতই সেদিন হয়ে যায় মুক্তির শিখা। যা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এর পর থেকেই আন্দোলন পায় অন্যগতি। আবু সাঈদ জানত, যে কোনো সময় বুলেট এসে তাকে মৃত্যুর দোয়ারে নিয়ে যেতে পারে। তবুও নিষ্পেষণ আর অন্যায়ের জাঁতাকল থেকে জাতিকে মুক্ত করতে বুক চেতিয়ে দুহাত তুলে দাঁড়িয়েছিলেন রাজপথে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার বাহিনীর হাতে নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষার্থী শহিদ আবু সাঈদ। যিনি স্বৈরাচার বাহিনীর অস্ত্র গোল- বারুদকে ভয় না করে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সাহস করে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলেন। নিজের জানের কথা, পরিবারের কথা চিন্তা করেননি। শুধুমাত্র দেশের চিন্তা করেছেন।

আবু সাঈদের সাহসিকতা দেখে এদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বৈরাচারী শাসকের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেছিল। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন নস্যাৎ করতে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। গায়ে গুলি লাগার পরও সাহস নিয়ে বুক ও দুহাত প্রসারিত করে পুলিশের সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। গুলি তার শরীর ভেদ করে গভীরে ঢুকে গিয়েছিল জেনেও সে সামনে এসে বুক পেতে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরই লুটিয়ে পড়ে পিচঢালা রাস্তায়। জুলাই অভ্যুত্থানে প্রথম শহিদ হন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। বস্তুত, ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে হত্যা পুলিশের মধ্যযুগীয় বর্বরতা, যা বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দাবানল জ্বালিয়ে দেয়। সেদিন থেকে শুরু হয় ছাত্র-জনতার মৃত্যুর মিছিল।

১৬ জুলাই বিশ্ব দেখেছিল নির্মমভাবে আবু সাঈদকে হত্যার দৃশ্য। তার মৃত্যুতে হাসিনা সরকারের অন্যায়, অমানবিকতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ। সেদিনই আবু সাঈদ হয়ে যান জুলাই আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। আবু সাঈদ জুলাই আন্দোলনে নতুন ভাষা দিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ নিজের জীবন উৎসর্গ করে হয়ে উঠলেন অকুতোভয় বীর। জুলাই অভ্যুত্থানে তিনিই সারা দেশে আন্দোলন বেগবান করে তোলেন। পীরগঞ্জের বাবনপুর প্রত্যন্ত গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে ২০০১ সালে আবু সাঈদের জন্ম। তার বাবা মকবুল হোসেন এবং মা মনোয়ারা বেগম। ৯ ভাইবোনের অভাবের সংসারে শুধু আবু সাঈদেরই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। সে বিপ্লবী হিসেবে যে খ্যাতি লাভ করেছে, তেমনি ছাত্র হিসেবে বিনয়ী, নম্র, ভদ্র ও মেধাবী ছিল। আবু সাঈদ শুধুমাত্র ছাত্র হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে ও ছিল অসাধারণ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত