ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ডেঙ্গু রোধে চাই নাগরিক সচেতনতা

সামিন ইয়াসার
ডেঙ্গু রোধে চাই নাগরিক সচেতনতা

বর্তমান সময়ে ডেঙ্গু যেন এক মহামারি রূপ ধারণ করছে। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থেকে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৩১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৯ হাজার ১২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে! যার ভেতর ৭৩ জন ডেঙ্গুর কাছে হার মেনে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে।

জানা গেছে, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি বেশিরভাগ রোগীই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। বিষয়টা এমন না যে ঢাকার হাসপাতালে শুধুমাত্র ঢাকার অবস্থানরত রোগীরাই ভর্তি হচ্ছে; আসছে ঢাকার বাইরে থেকেও।

সারাদেশে ডেঙ্গু এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, হাসপাতালগুলোতেও অধিক চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে ডেঙ্গু বর্তমান সময়ে এক নীরব মহামারিতে রূপ নিচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমাদের সমাজে অনেক মানুষ মনে করে ডেঙ্গু কেবল মশার কামড়েই হয়, ব্যাপারটা আসলে এমন না মোটেও। এডিস ইজিপ্টাই নামক স্ত্রী মশা যদি কাউকে কামড়ায় এবং সে মশা যদি আগে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়িয়ে থাকে, তাহলে সেই ভাইরাস মশার শরীরে ঢুকে পড়ে। এরপর সেই মশা আবার কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালে, তার শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে এবং সে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়।

এর মানে হলো, এডিস ইজিপ্টাই যে শুধুমাত্র ডেঙ্গুকে ডেকে আনে তা নয়; এর পেছনে রয়েছে আমাদের অসতর্কতা এবং অবহেলা। কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে একইভাবে আমরাও দায়ী। কেননা, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এডিস মশা প্রজননে আমরাই তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য করি। জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে এবং সেখানেই লার্ভার জন্ম হয়। প্লাস্টিকের পাত্র কিংবা ফুলদানিতেই নয়; ফ্রিজ অথবা এসির নিচে জমে থাকা পানিই যথেষ্ট এডিস মশা জন্মের জন্য বলা যেতে পারে। এসবই এডিস মশা প্রজননের উপযুক্ত স্থান এবং বলতে আর অপেক্ষা রাখে না, আমরাই এসব বিষাক্ত প্রাণঘাতী মশার জন্ম ও বিস্তারের ক্ষেত্রে আমাদের অবদানই সবচেয়ে বেশি এবং এসব মশা সকাল কিংবা বিকালেই কামড়ায় মানুষকে।

অর্থাৎ, রাত থেকে দিনের বেলাতেই আমাদের বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ এসব মশার আক্রমণ থেকে। সুতরাং, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, বাড়িতে আনাচে-কানাচে কিংবা কোনো স্থানে যেন পানি জমে না থাকে সেই বিষয়ে সবসময় সতর্ক এবং নিশ্চিত থাকতে হবে এটিই এখন আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে, সরকারি উদ্যোগেও আমরা ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে পারি বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে।

যা যা করা যেতে পাওে : ১. নিয়মিত সময়মতো ওষুধ এলাকার প্রতিটি স্থানে ছিটানো। ২. মহল্লার ওয়ার্ড পর্যায়ের কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে সপ্তাহে এক থেকে দুইদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযানের দায়িত্ব নেওয়া যেতে পারে।

৩. ‘নিজ ঘর, নিজ দায়িত্ব’ এমন সচেতনামূলক উদ্যোগেকে অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। ৪. হেল্পলাইনের ব্যবস্থা করা যেখানে স্থানীয় মানুষেরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখতে পারে। ৫. নিয়মিত তদারকির জন্য প্রতিটি মহল্লায় স্পেশাল মনিটরিং টিম বা টাস্কফোর্স গঠন করা। এই টিমের প্রধান কাজ হবে এডিস মশা নিধনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা এবং সমস্যা আঁচ করতে পারলে তা দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো। শুধু সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই হবে না; আমাদেরও সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সচেতন না হলে ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব না। এডিস মশা প্রজননে ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকাই সবচেয়ে বড়। আমাদের অসচেতনতা, অবহেলার কারণেই ডেঙ্গু এখন ঘরে-ঘরে। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনের দিকে ঠিক থাকলে আমাদেরও উচিত, নিজেদের দিক থেকে যেন ঠিক থাকি কোনো গাফলতির পথে যেন না হাঁটি। আমি মনে করি, উপরিউক্ত আলোচনা অনুযায়ী রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের জনগণ যদি যথাযথভাবে কাজ করে তবেই ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাবে এদেশের জনগণ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং জনগণের সম্মিলিত ভূমিকা অপরিহার্য। সবার প্রতি আহ্বান থাকবে আসুন নিজেরা সতর্ক হই, অন্যকেও সতর্ক করি। আমাদের অসতর্কতার কারণে, কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দিয়ে সবাই মিলে একত্রে সুস্থ, নিরাপদ ও সচেতন সমাজ গড়ে তুলি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি

ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত