ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নির্বাচনের বিকল্প নেই

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে নির্বাচনের বিকল্প নেই

সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ না থাকলে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে না। বিনিয়োগের সঙ্গে কর্মসংস্থান, উৎপাদন ব্যবস্থা গতিশীল হওয়া, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ইত্যাদি জড়িয়ে থাকে। অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অর্থনীতি অনেকটা উল্টো পথে ধাবিত হয়েছে। প্রত্যেকটি সূচক নিম্নগামী। ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, কর্মসংস্থান, ঋণপ্রবাহসহ সবক্ষেত্রে ভয়াবহ মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। অর্থনীতির প্রাণ ‘বিনিয়োগ’ শূন্যের কোঠায় নেমেছে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর ধারণা করা হয়েছিল, ফোকলা হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে এনে সরকার গতিশীল করতে পারবে। অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। এর কিছুই হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে বিনিয়োগকারিদের উৎসাহিত করার জন্য ঘটা করে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়।

ঘোষণাও হয়, ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে-বিদেশে বিপুল গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ, এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। ধারণা করা হয়েছিল, এসব অর্থ দেশে আসলে শূন্য হয়ে যাওয়া অর্থনীতির ভাণ্ডার পূর্ণ হতে বেশি সময় লাগবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, তার কিছুই আসেনি। প্রতিশ্রুত এসব অর্থ আনার ব্যাপারেও উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। বিনিয়োগ না হওয়ায় অর্থনীতিও দিন দিন রুগ্ন থেকে রুগ্ন হচ্ছে।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২২ বছরের মধ্যে এ প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন। এর কারণও রয়েছে, হাসিনার পতনের পর তার স্তুতি গেয়ে সুবিধা নেওয়া অনেক ব্যবসায়ীর কেউ জেলে, কেউ পালিয়ে গেছে।

এতে তাদের ঋণ নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। উল্টো তাদের খেলাপী ঋণ বেড়েছে। বিনিয়োগে এর যেমন নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, তেমিন অন্যান্য ব্যবসায়ীও দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, সরকারের সিদ্ধান্তের অনিশ্চয়তা প্রভৃতির কারণে হাত গুটিয়ে বসে আছে। তারা অপেক্ষা করছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে প্রতিনিয়ত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। কখন কোন ঘটনা ঘটবে, তার নিশ্চয়তা নেই। সরকারও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ মানুষের মধ্যকার অনিরাপত্তাবোধ দূর করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারিদের উৎসাহী হওয়ার কারণ নেই। অর্থনৈতিক সংকট সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে। অভাব-অনটনে অনেকের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থানের অভাবে যুবসমাজের মধ্যে হতাশার জন্ম নিচ্ছে।

হতাশা থেকে অনেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিতে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এ ধরনের পরিবেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারিরা ভরসা পাচ্ছে না। বিদ্যমান শিল্পকারখানায় উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, আমদানি-রপ্তানিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পূরক শুল্ক কমানো নিয়ে এখন পর্যন্ত সুরাহা না হওয়ায় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্প স্থবির হয়ে পড়ছে। এ শিল্পে ধস নামার শঙ্কায় কারখানা মালিকরা দিন কাটাচ্ছে। শুল্ক সমস্যার সুরাহা না হলে, এ শিল্পের টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। অনেক কারখানায় শ্রমিক-কর্মকর্তা ছাঁটাই করা হচ্ছে। এতে বেকারত্বের হার বাড়ছে। এর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছে। অর্থনীতির আরেক রপ্তানি খাত জনশক্তির মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়লেও তা যথেষ্ট হচ্ছে না।

সরকারের মধ্যে নতুন নতুন রপ্তানি খাত সৃষ্টিরও কোনো উদ্যোগ নেই। বিদ্যমান রপ্তানি খাতই সরকার ঠিক রাখতে পারছে না। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সচল হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে। এটা এখন স্পষ্ট, সরকার অর্থনীতিকে সচল করে জনজীবনে স্বস্তি আনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। উল্টো সরকারের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অর্থনৈতিক এই দুরবস্থার মধ্যে দুর্নীতি হলে, কীভাবে তা চাঙা হবে। সরকারের অনেক উপদেষ্টার মধ্যে দেশের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার লক্ষণ নেই। তাদের আচরণ এমন হয়ে পড়েছে, নিজের আখের গুছিয়ে কেটে পড়ব, পরের সরকার এসে তা সামাল দেবে। যতদিন পারা যায়, এভাবে ক্ষমতা উপভোগ করে যাব। পর্যবেক্ষকদের মতে, এভাবে উদ্যোগহীন কোনো সরকার চলতে পারে না।

সরকারের উচিত হবে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেওয়া। এটা বোঝা যাচ্ছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারিরা নির্বাচন এবং পরবর্তী স্থিতিশীল সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে। এক্ষেত্রে, অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের সামনে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন ছাড়া বিকল্প নেই। এ সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব অর্থনীতির উন্নয়নে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা জেলে বা পালিয়ে গেছে, তাদের প্রতিষ্ঠান সচল রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত