ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তরুণ প্রজন্মকে বই পড়তে হবে

হাফিজ মুহাম্মদ
তরুণ প্রজন্মকে বই পড়তে হবে

আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে তরুণ প্রজন্মরা বইপড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার আগে মানুষ নিয়মিত বই পড়ত এবং নিজেদের জ্ঞানপরিধি বৃদ্ধি করত। কখনও তারা শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় নৈতিকতা সম্পর্কে বইপড়ে উপকৃত হতেন।

একজন লেখক তাঁর সুপ্তভাবনা ব্যক্ত করেন লেখনীর মাধ্যমে। অর্থাৎ বইয়ের পাতায় পাতায় ঢেলে দেন জ্ঞানের বাণী। যা মানব কল্যাণে আশীর্বাদস্বরূপ। এ জন্য বইপড়া নিয়ে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে কোনো বিকল্প নেই! অপরদিকে তরুণ প্রজন্মরা যদি বইপড়া থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তাদের জীবন অন্ধকারে ছেয়ে যাবে। বিখ্যাত আমেরিকান লেখক মার্ক টোয়েন বলেন, ‘ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি শান্ত বিবেক : এটি আদর্শ জীবন।’

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর উল্টোটা দেখা যায়। কেননা, আমাদের সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে কিশোরগ্যাঙের দৌরাত্ম্য। যাদের আলোকিত ভবিষ্যতের কর্ণধার ভাবা হতো তারা শুধু জাহেলিয়া যুগের পরিবেশকে টেনে আনছে। কেউ কেউ আবার চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি কিংবা মাদক নেশায়মত্ত।

ফলে তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই বইপড়াকে যন্ত্রণার ছাপ হিসেবে মনে করে। ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে অবশ্যই এই তরুণ প্রজন্মকে বইপড়া নিয়ে আগ্রহী হতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে বিভিন্ন পাঠাগার। সেখানে লক্ষ্য করা যায়, পাঠক সংখ্যা নেই বললেই চলে! যদিও পাঠক জোটে, একটা ভালো বই নির্বাচন করার সক্ষমতা হাতে গোনা দু’একজনের। বিশাল জনসংখ্যার দেশে তা বড় লজ্জাজনক ব্যাপার! দেশের মানুষ বইপড়ার মন-মানসিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং অনেকেই দুশ্চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে। পক্ষান্তরে তরুণ প্রজন্মরা আজকাল বইপড়া থেকে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। কখনও মেসেজ লিখতে অনায়াসে বাংলিশ শব্দ ব্যবহার করায় বাংলা ভাষার মান প্রতিনিয়ত বিকৃতি ঘটছে।

নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভবিষ্যতে তরুণ প্রজন্মরা হাতের লেখা কি তা ভুলে যাবে। বর্তমান শুধু পরীক্ষার খাতা বাদে হাতের লেখার প্রতি প্রবল অনীহা রয়েছে। ঘুরেফিরে বারবার একটা প্রশ্ন সবার মনে জাগে? কেন আমাদের তরুণ প্রজন্মরা নিয়মিত বই পড়বে? বলতে গেলে বইপড়া নিয়ে অনেক সুবিধা রয়েছে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ?বৃদ্ধি পাবে। ডিপ্রেশন বা চাপ কমানোর ভালো অভ্যাস গড়ে ওঠবে। নিত্যনতুন শব্দভাণ্ডার তৈরি করতে পারবে এবং বাংলা ভাষার মান আরও সমৃদ্ধ হবে। স্মৃতিশক্তি উন্নতির পাশাপাশি চিন্তার দক্ষতা বাড়বে, সেইসঙ্গে লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

মানসিক প্রশান্তিসহ বিনোদনের মাধ্যম অনুভব করবে। সর্বোপরি, শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে হলে পরিবারের অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটু দায়িত্ব নিতে হবে। প্রাইভেট কিংবা কোচিং সেন্টারে শুধু পাঠ্যবই বা নোট পড়ানো নয়, সেখানে সপ্তাহে কমপক্ষে এক দিন আধঘণ্টা করে অন্যান্য বই পড়াতে হবে।

বর্তমান বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মধ্যে থালা, বাটি, জগসহ বিভিন্ন পুরস্কারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। কিন্তু সেখানে যদি ভালো লেখকের বই বিতরণ করা যেত, তাহলে তরুণদের মাঝে বইপড়া নিয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কেননা, জ্ঞানচর্চা প্রতিটি জাতিকে মহৎ করে তোলে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বইপড়া নিয়ে আগ্রহ বেশি এবং প্রত্যেকের কমবেশি ব্যক্তিগত পাঠাগার রয়েছে। অথচ আমাদের দেশে বইপড়া নিয়ে উদাসীন মনোভাব। যা তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে প্রবাহিত করে। আসুন, আমরা নিয়মিত বইপড়ি, নিজের জ্ঞানশক্তি ও বিবেকবোধ জাগ্ররিত করি। সমাজে এই স্লোগান অব্যাহত থাক- ‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই।’ পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তিগত পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে এবং ছোটদের বইপড়া নিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে হবে। তাহলে বদলে যাবে সমাজ, বদলে যাবে দেশ।

লেখক : শিশুসাহিত্যিক, গীতিকার ও কলামিস্ট, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত