প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০২ আগস্ট, ২০২৫
পৃথিবী নামের এই গ্রহে প্রতিদিন যত পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয়, তা দিয়ে গোটা মানবজাতিকে পেটভরে খাওয়ানো সম্ভব।
অথচ এই একই পৃথিবীতে একটা জাতি (গাজাবাসী) শুধু খাদ্যের অভাবে, চিকিৎসার অভাবে, পানির অভাবে দিনের পর দিন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। কেউ রক্তাক্ত, কেউ অনাহারে কংকালসার হয়ে। আর আমরা তথাকথিত সভ্য পৃথিবী চুপ করে শুধু মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, নারীর অধিকার এসবের বুলি আওরাচ্ছি।
আজ গাজা বিশ্বের সবচেয়ে বড় খোলা কারাগার। খাদ্য সরবরাহ বন্ধ, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, চিকিৎসা নেই, পানি নেই, আশ্রয় নেই। কোনো ত্রাণ গাজায় যেতে পারছে না, তার আগেই আটকা পড়ছে ইসরায়েলের হাতে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে যত রকম নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার মধ্যে একটা পুরো জাতিকে অনাহারে মেরে ফেলার এই পদ্ধতি নিষ্ঠুরতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
যেসব বিশ্বনেতার আমরা মুখে ন্যায়বিচারের বুলি শুনি, তারাই আবার অস্ত্র বিক্রিসহ নানা ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমেই এই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক আদালত সবকিছুই আজ নীরব দর্শক হয়ে গাজায় খাদ্যের অভাবে শিশু, বৃদ্ধ, যবুক, নারীদের মৃত্যু উপভোগ করছে। কি চরম বর্বরতা!
এই পৃথিবীতে খাদ্যের কষ্ট যেকোনো কষ্টকে হার মানাতে পারে। কিন্তু যে শিশুটি পাউরুটি চেয়ে রাস্তায় গুলি খায়, তার দোষ কী? পৃথিবীতে নিজের মৌলিক অধিকারটুকু নিয়ে বেঁচে থাকা দোষের? কিন্তু বিশ্ববিবেক আজ নিরুপায় হয়ে চুপ হয়ে আছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা গাজায় মানবাধিকারকে নগ্ন করা হলেও সামান্যতম ভ্রুক্ষেপও করছে না। কখনও বাংলাদেশেও যদি এরকম নৃশংসতা শুরু হয়, ঠিক এমন ভূমিকাই রাখবে, যতটুকু রেখেছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে।
ইসরায়েলের আক্রমণে গাজার শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেসব শিশু মারা গেছে, তাদের মধ্যে ২১ জনের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। সংস্থাটি বলছে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৮০ দিন তারা গাজায় কোনো খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে পারেনি। বর্তমানে কিছু খাদ্য সহায়তা পাঠানো শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এক যৌথ বিবৃতিতে মার্সি কর্পস, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল এবং রিফিউজিস ইন্টারন্যাশনালসহ ১১১টি আন্তর্জাতিক সংগঠন জানিয়েছে, ‘গাজায় এখন গণঅনাহারের পরিস্থিতি চলছে’। অথচ সীমান্তের বাইরে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি ও ওষুধ মজুদ থাকলেও সেগুলো সহায়তাকারী সংস্থাগুলো প্রবেশ করতে পারছে না।
বিশ্ব আজ নোংরা রাজনীতির খপ্পরে। ইসরায়েল, যার কোনো ভিত্তিই ছিল না। ফিলিস্তিনে উড়ে এসে জুড়ে বসে আজ পুরো ফিলিস্তিনকে জাতিগতভাবে নিধন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিবিদরা কিছুই করতে পারছে না। তীব্র খাদ্যসংকট, মানবাধিকার সংকটেও ইসরায়েলের লেলিহান দৃষ্টির সামনে কেউই আসছে না।
যুদ্ধ সমাধান নয় বরং সংকট বাড়ায়। বিশ্ব নেতাদের উচিত একটা সুন্দর পৃথিবী গড়তে, গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতাকে দমন করে মানবাধিকারকে রক্ষা করা। গাজার সংকটের রাজনৈতিক, মানবিক ও কূটনৈতিক সমাধান দরকার। বিশ্ব নেতাদের উচিত সক্রিয় হয়ে, কূটনৈতিক ও প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে, এই বর্বরতা থামানো। গাজার শিশুরাসহ কোনো নাগরিক যেন আর ক্ষুধার কারণে মারা না যায়। এই মানবিকতা রক্ষা করাই হোক আগামী দিনের আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা