প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৪ আগস্ট, ২০২৫
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত একটি কমিশন। দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থা। এটি ২০০৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন কার্যকর হয়েছে। এরপর ২০১৩ ও ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। দেশে দুর্নীতি ও দুর্নীতিমূলক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে একমাত্র স্বীকৃত সংস্থা এটি। বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. আবদুল মোমেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত শান্ত, নিরুপদ্রব, বিনয়ী, সহজ-সরল ও কোমল মনের মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনের এ কোমলতার বিপরীতে পেশাগত জীবনে ঠিক সম্পূর্ণ অন্য এক ড. আবদুল মোমেনকে আমরা দেখতে পাই। এ ক্ষেত্রে তিনি বড়ই কঠিন ও আপসহীন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি কখনও অন্যায় ও অসত্যের কাছে মাথানত করেননি। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি লাভের আকাঙ্ক্ষায় প্রভাবিত হননি। সবকিছু উপেক্ষা করে অবিরাম স্বীয় কর্তব্য পালন করছেন। সততা ও নিজ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈরী আচরণ করেননি। সৎ ও সুন্দরভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের কাজটি যে গোষ্ঠী, সম্প্রদায় এবং রাজনীতির চেয়ে জরুরি; এটা তিনি দেখিয়েছেন নিষ্ঠার সঙ্গেই।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার দিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে ৪৭টি সুপারিশ করার কথা জানিয়েছে এ-সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তনের সুপারিশ রাখা হয়েছে। কমিশনারদের সংখ্যা তিনজন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন এবং দুদককে বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে তারা। এসব সুপারিশ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, দুদককে শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য আছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় থেকে দুর্নীতির লাগাম টানতে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনকে সংবিধানে একটি নতুন অনুচ্ছেদে যুক্ত করার প্রস্তাবটি ইতিবাচক বলে সব রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা মতামত দিয়েছেন। তবে আলোচনায় প্রস্তাবিত কাঠামোর কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ দেওয়া হয়। কেউ কেউ নতুন প্রস্তাবও দিয়েছেন। এসব বিবেচনায় নিয়ে ঐকমত্য কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
গত সোমবার রাজধানী ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। এ সময় কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ওই বৈঠকে কিছু বিষয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতীকী ওয়াকআউট করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। দুটি আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল- সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত।
আমরা মনে করি, প্রভাবশালীদের দুর্নীতি দমনে দুদককে সরকার ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। পাশাপাশি এ সংস্থাকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবেই পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত সুফল।