প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৪ আগস্ট, ২০২৫
ষড়যন্ত্র দেশে তো চলছেই, বিদেশের মাটিতেও চলছে বড় ষড়যন্ত্র। পালানোর প্রক্রিয়া শেষ করার পর ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা কিছুকাল হয়তো ধকল সইতেই চুপ ছিল। কিন্তু কিছুদিন থেকে তারা আবারও দেশকে দখল করার নেশায় মেতে উঠেছে। বিশেষ করে ভারত এবং অন্যান্য দেশে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা সরকার উৎখাতের বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে তৎপর হয়ে পড়েছে। এই উৎখাত পরিকল্পনার অংশ হিসাবে তারা প্রথমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরার কারণে প্রথম দফার সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ‘আগস্ট রিটার্ন হিট প্ল্যান’ নামে ছক কষেছিল তারা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধাপে ধাপে ছিল ভয়াবহ সব নাশকতার ছক। তবে দেশবিরোধী এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একদল দেশপ্রেমিক পেশাদার কর্মকর্তা বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এই টিমে সেনা ও পুলিশ বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত টিম নানাভাবে রাত-দিন কাজ করেছে।
বলাবাহুল্য, ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম দফার অপতৎপরতার ছক একে একে ব্যর্থ হলেও তারা কিন্তু বসে নেই। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র মারফত জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাতে দেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য দ্বিতীয় ধাপের ষড়যন্ত্রের ছক হাতে নেওয়া হয়েছে-যা তারা বাস্তবায়ন করতে চায় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে। এর আগে সরকারকে অচল করে দিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিশেষ কিছু কার্যক্রম তারা শুরু করতে চায়। এসব গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের পলাতক শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।
কাজের সমন্বয় করতে ইতোমধ্যে কলকাতা ও দিল্লিতে আওয়ামী লীগের পৃথক গোপন অফিসও খোলা হয়েছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ চক্রের কাজে সহায়তা দিতে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার ফ্যাসিস্ট সমর্থক সদস্যরা নেপথ্যে থেকে সক্রিয়ভাবে রসদ জোগাচ্ছেন।
বিষয়টি উদ্বেগজনক, সন্দেহ নেই। সবাইকে মনে রাখতে হবে, সবার আগে দেশ। একটি সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এত মানুষ এভাবে জীবন দিয়ে গেছে। ওদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে উদাসীনতার কারণে হলেও এদেশকে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার অর্থ হবে, সেই রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা। এ কারণে সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা নাশকতা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চাইবে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় নামতে হবে।
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যারা অচলাবস্থাকে পুঁজি করে দেশ ও দশের ক্ষতি চায়, তাদের ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই। তারা দেশবিরোধী কুচক্রী, যথাযথ তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই তাদের প্রাপ্য। ২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলনের’ মাধ্যমে স্থবির দেশকে গতিশীল করার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাকে কোনোভাবেই নস্যাৎ করতে দেওয়া যাবে না। এজন্য সরকারকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দিকে এগিয়ে যাবে- এটাই প্রত্যাশা।