ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বেহাল দশায় ফুটওভারব্রিজ

বেহাল দশায় ফুটওভারব্রিজ

রাজধানীর ফুটওভারব্রিজগুলো এখন আর নাগরিক সেবার প্রতীক নয়, বরং নাগরিক দুর্ভোগ, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিতএক প্রতিবেদনে দেখা যায়- অধুনিকায়নের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব ফুটওভারব্রিজ চালু হওয়ার অল্পদিনের মাথায় শুধু অকার্যকরই হয়নি, চলে গেছে ছিন্নমূল, হকার ও মাদকাসক্তদের দখলে। আধুনিক নাগরিক সেবার প্রতীক হিসাবে প্রচার করা চলন্ত সিঁড়িগুলোও এখন অকেজো, জং ধরা লোহালক্কড়ের কাঠামোতে পরিণত হয়েছে। ওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়িগুলো বন্ধ থাকায় শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের রাস্তা পারাপার দুঃসহ যন্ত্রণায় রূপ নিয়েছে। দেখা গেছে, বিমানবন্দরের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানেও সিঁড়ি অকেজো হয়ে রয়েছে, ব্রিজে লাইট না থাকায় বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ। যারা দেশের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করেন, সেই প্রবাসী যাত্রীরাও দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে এর করুণ দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, যা লজ্জাজনক তো বটেই, নিঃসন্দেহে আমাদের নাগরিক সেবার মানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এদিকে, রাজধানীর এসব গুরুত্বপূর্ণ ফুটওভারব্রিজ মানববর্জ্য, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় এবং ছিনতাই, গাঁজা সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে এগুলো ‘ফুটওভার বস্তি’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিবেশের মধ্যেও যারা নিয়ম মানতে চান, তাদের নাক-মুখ চেপে ধরে পারাপার হতে হচ্ছে। এর চেয়েও উদ্বেগের বিষয় হলো- ফার্মগেট, শ্যামলীসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটওভারব্রিজে হকারদের রাজত্ব চলছে মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে, যেখানে স্থানীয় পাতিনেতা ও সিটি কর্পোরেশনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ আছে বলে রয়েছে অভিযোগ। বলা বাহুল্য, একটি আধুনিক শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশকে এমন অবস্থায় কোনোভাবেই ফেলে রাখা যায় না। এটি কেবল অবহেলার ফল নয়, বরং জনগণের অর্থের অপচয়ের চরম দৃষ্টান্ত।

আমরা মনে করি, ফুটওভারব্রিজগুলো কেবল পথচারী পারাপারের জন্য নয়, বরং নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন নাগরিক অধিকারের প্রতীক হওয়া উচিত। তাই ফুটওভারব্রিজের দুর্নাম ঘোচানোর জন্য শুধু সংস্কার নয়, বরং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা জরুরি। আশার কথা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ফুটওভারব্রিজ সংস্কার, চলন্ত সিঁড়ি মেরামত এবং হকার উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষের এই প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফুটওভারব্রিজগুলো আবারও চলাচলের উপযুক্ত হোক, এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত