প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০১ অক্টোবর, ২০২৫
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার মাধমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, এটাই ছিল দেশবাসীর প্রত্যাশা। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ১৬ হাজার ৮০৫ জন। তাদের মধ্যে তিন হাজার ৫৮ জন দুই ধরনের শিক্ষা ছুটিতে আছেন। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরিও করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বেসরকারি বিভিন্ন প্রজেক্ট ও বিদেশি সংস্থায় পরামর্শক হিসাবেও কাজ করেন। এছাড়া দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় এক সমস্যা হলো- শিক্ষক সংকট। রাজধানীর বাইরে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের অভাব থাকায় জুনিয়র শিক্ষক দিয়েই চলছে লেখাপড়া। এসব কারণে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি নেওয়া স্বাভাবিক এবং এটি প্রয়োজনীয়। উচ্চতর গবেষণা জাতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তবে যখন শিক্ষকদের অনেকে ডিগ্রি শেষ করেও আর দেশে ফেরেন না বা ফেরার পর দায়িত্বে অবহেলা করেন, তখন সেটি মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে। খণ্ডকালীন চাকরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নীতি না থাকায় অনেকেই পূর্ণকালীন দায়িত্বে ফাঁকি দিচ্ছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি করছেন, অনেকে নিজের বিভাগে কোনোরকমে ক্লাস নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে ছুটতে থাকেন, এমন অভিযোগ রয়েছে। বস্তুত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনো শিক্ষকের দায়িত্ব সচেতনতার বিষয়টি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষা ছুটি গিয়ে কেউ কেউ নিজের ক্যারিয়ার উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, এটি দুঃখজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরির কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এটি নিশ্চিত করতে হবে।
দেশে গবেষণার সুযোগ বাড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছেন না। অনেক শিক্ষক নিজ নিজ ক্ষেত্রে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও এমন শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই কম। অনেকে উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়াই শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ। আমরা জানি, মেধাবীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তাদের বেতনও সন্তোষজনক। এ প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রচুর গবেষণাকর্ম স্থান পাওয়ার কথা; কিন্তু বাস্তবচিত্র হতাশাজনক। দেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানসম্মত গবেষণা একেবারেই কম। মানসম্মত গবেষণা না থাকায় অনেক শিক্ষকের নেই মৌলিক গ্রন্থ। এসব সংকট কাটাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক যাতে অনিয়ম করে পার পেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।