ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

উপকূলে স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসে উদ্যোগী হন

উপকূলে স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসে উদ্যোগী হন

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, দেশের সমতল অঞ্চলে গর্ভপাতের হারের তুলনায় উপকূলীয় এলাকায় এটি তিন গুণেরও বেশি। এটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়। গবেষণাটি বলছে, সমতলের ৯ শতাংশের জায়গায় উপকূলীয় অঞ্চলে এ হার ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলে লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। ফল হচ্ছে অস্বাভাবিক গর্ভপাত। দেখা যাচ্ছে, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও গর্ভধারণের কোনো একসময় গর্ভপাতের মতো দুর্ভাগ্যকে মেনে নিতে হচ্ছে অনেক নারীকে। অথচ গর্ভধারণের সময়ে পরীক্ষায় মেলেনি বিশেষ কোনো সমস্যা বা জটিলতা। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত পানি আর তীব্র গরমই দায়ী বলছেন গবেষকরা।

এভাবে তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার প্রভাবে উপকূলের মানুষ পড়ছে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য। শুধু গর্ভপাত নয়, বাড়ছে কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ার হার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হিট স্ট্রোক, হিট ওয়েভ, কলেরা, উচ্চ রক্তচাপ ও শিশুমৃত্যুর মতো সমস্যা। জানা যাচ্ছে, অঞ্চলটিতে ঘরবাড়ির চার-দেয়াল টিনের হওয়ায় বাড়ির ভেতরে তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি। আবার সামাজিক রীতিনীতির কারণেও নারীরা প্রায় সারা দিন থাকেন ঘরের ভেতরেই। এ অতিরিক্ত গরম শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বাদের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি।

গবেষকরা বলছেন, পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মানুষ বাধ্য হয়ে সেই পানি পান করছে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে; বাড়াচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। জলবায়ু পরিবর্তনে জীবনযাত্রা ও খাদ্য নিরাপত্তা পড়ছে হুমকির মুখে। এদিকে জার্মানওয়াচ গ্লোবালের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই-২০২০) অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ ১০ দেশের একটি। বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় এলাকার নারী ও শিশুরা পড়ছে সংকটে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি গ্রহণের কারণে জরায়ুর জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশুর জন্মও বাড়ছে।

আমরা জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় আমাদের দেশের নাম ওপরের দিকে। অবশ্য আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের ভূমিকা কম। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে শিল্পনির্ভর দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণই এ কুপ্রভাবের জন্য প্রধানত দায়ী। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা দরকার ওইসব দেশের। তবে যেহেতু আমরা এর সরাসরি শিকার, তাই এটা আগে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এর কুপ্রভাব থেকে নিজের রক্ষার উপায় বের করতে হবে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যা এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নিরাপদ বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস-সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। একইসঙ্গে অঞ্চলটিতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও সহনশীল আবাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

স্মরণে রাখতে হবে যে, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় চারভাগের একভাগ মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দা। দেশের বিরাটসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ভয়াবহ এক স্বাস্থ্যসংকটের ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তারা অবশ্যই রাষ্ট্রের তরফ থেকে যথাযথ পদক্ষেপের অধিকার রাখে। আমাদের প্রত্যাশা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত