প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
গতকাল একটি প্রতিবেদনে মানসিক রোগের অতি খারাপ একটি খবর পড়েছি। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে এখন মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি। এর মধ্যে চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়েছে ৯০ শতাংশ আর এক-তৃতীয়াংশ এ রোগের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, এই পরিসংখ্যান দেশের স্বাস্থ্য খাতের এক ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা বলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘাত, বাস্তুচ্যুতি, অতিদারিদ্র্য ইত্যদি মানুষের মনস্তত্ত্বে প্রভাব ফেলছে এবং তারা হয়ে পড়ছে মানসিক রোগী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে যখন, তখন শুধু অবকাঠামো নয়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষের জীবনও। ওদিকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে নিপতিত হয়ে মানুষ যখন নিজেরসহ পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধা মেটাতে পারে না, তখনও তা তার মনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এভাবেই মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে এত অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।
গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্যের মূল কথা ছিল, বিপর্যয় অথবা জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। প্রতিপাদ্যে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য সহায়তা ও চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজের প্রচলিত ভুল ধারণা, কলঙ্ক ও বৈষম্য দূর করা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা। তিনি বলেছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি অপরিহার্য। এটাই যখন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে উপলব্ধি, তখন বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসার সুযোগ খুবই সীমিত।
সরকারি পর্যায়ে রোগটির জন্য শয্যা রয়েছে মাত্র ১২৪০টি। অন্যদিকে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা যে খুব ব্যয়বহুল, তা সবার জানা। মানসিক রোগের চিকিৎসার একটি বড় সমস্যা হলো, কখন কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, তা বুঝে উঠতে না পারা। আমাদের মত হচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়া দরকার। মানসিক কোন্ অবস্থাকে অসুস্থতা বলে এবং সেই লক্ষণ দেখা দিলে কীভাবে চিকিৎসা ঠিক করতে হবে, সে ব্যাপারে জনগণের একটা ধারণা থাকা চাই। আবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অনবরত পর্যবেক্ষণে রাখার ব্যবস্থাও জরুরি। এ কাজে স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন করতে পারে। আমরা শুধু দৈহিক নয়, মানসিকভাবে সুস্থ একটি জাতি গড়তে চাই, আর সেটা সম্ভব হলেই দেশ এগিয়ে যাবে।