প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং দীর্ঘ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকার কারণে মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, স্মার্টফোনের কারণে সহানুভূতি, মানসিক বুদ্ধিমত্তা ও গভীর সম্পর্ক তৈরির স্নায়ুপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বস্তুত স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় মানুষ সৃজনশীল চিন্তা করার অবকাশ পায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, যুক্তি-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়; মস্তিষ্ক দ্রুত বৃদ্ধ হতে থাকে। ফলে কম বয়সেই স্ট্রোক, আলঝেইমারস ডিজিজ, পারকিনসনের মতো সেরিব্রোভাস্কুলার ও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে। বর্তমানে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শিশু ও তরুণরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেহেতু আজকের শিশুরা রেডিয়েশনঘেরা পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে সেহেতু ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবহারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের মস্তিষ্ক ইলেকট্রনিকস পণ্য থেকে নির্গত ক্ষতিকর তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। বড়দের তুলনায় শিশুদের মস্তিষ্ক প্রায় দ্বিগুণ এবং অস্থিমজ্জা প্রায় দশ গুণ বেশি বেতার তরঙ্গ শোষণ করে থাকে। গবেষকদের মতে, যেসব শিশু দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের মস্তিষ্ক ও কানে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকায় শিশুদের চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, শিশু ও তরুণরা দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করলে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে সতর্ক না থাকলে শিশু ও তরুণরা একের পর এক জটিল রোগে আক্রান্ত হবে।
যে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করার কথা, আমাদের অসতর্কতার কারণে তা ডেকে আনবে ভয়াবহ বিপদ। চিকিৎসকরা বলছেন, ডিজিটাল আসক্তি এখন ‘নীরব মহামারি’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সায়েন্সডিরেক্ট ডটকম’-এর তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে মুঠোফোন আসক্ত ২৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ, তার মধ্যে ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট আসক্ত। অন্যদিকে বাংলাদেশের আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে দেখা গেছে, দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্তি অনুভব করে। সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির অন্য এক জরিপের তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সক্রিয়। এর মধ্যে ১২ লাখ তরুণ নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করে মনিটাইজেশনের চেষ্টা করেন। তাদের বড় অংশ শুধু ভিউ ও লাইক বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন।
আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু। এর অতি ব্যবহার ও অপব্যবহারে বিপদ তৈরি হয়। এখনই যদি সবাই সচেতন না হই, তবে তরুণরা ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি হবে, যা দেশে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা স্মার্টফোনের সুবিধাটুকু অবশ্যই নেব। শিশু ও তরুণরা দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে যাতে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের খেলাধুলা, পাঠাভ্যাস ও সাংস্কৃতিকচর্চায় উৎসাহ দিতে হবে। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া শিশু ও তরুণদের এ ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।