ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন

সবার জন্য বাসস্থান   নিশ্চিত করা প্রয়োজন

এ বছরের বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া’। দেশের আবাসন বাস্তবতার সঙ্গে এ প্রতিপাদ্য নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত হলেও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে তা যেন এক নির্মম পরিহাস। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ দুস্থ পরিবার বাসস্থান ঘাটতিতে ভুগছে। এখনও চরম অসহায়ত্বে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ ভাসমান জীবন কাটাচ্ছে, প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বস্তি এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে বাসস্থান ঘাটতি ১ কোটি ৫ লাখে পৌঁছাতে পারে- যা শুধু একটি সংখ্যা নয়, কোটি কোটি মানুষের দুর্দশার আগাম বার্তা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংকটের মূলে রয়েছে সরকারি নীতি ও বাস্তবায়নের মারাত্মক ত্রুটি। সরকারের পক্ষ থেকে নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলো ধনীদের কবজায় চলে যাচ্ছে। বাস্তবিকই, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের মতো সংস্থাগুলো যে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, উচ্চমূল্যের কারণে বাস্তুহারা, দরিদ্র কিংবা নিম্নবিত্তরা তার নাগাল পাচ্ছে না। সরকারি আবাসন সুবিধার সুবিধাভোগী হচ্ছে মূলত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা, যাদের অনেকের একাধিক ফ্ল্যাট বা প্লট এরমধ্যেই রয়েছে। এ প্রবণতা শুধু আবাসন বৈষম্যই বাড়াচ্ছে না, বরং সরকারের সদিচ্ছার প্রতিও প্রশ্ন তুলছে। দেখা যায়, সরকার সস্তায় জমি অধিগ্রহণ করে আবাসন প্রকল্প তৈরি করছে; কিন্তু সেই সুবিধা ভোগ করছে এক বিশেষ শ্রেণির বিত্তবানরা- যা দেশের আবাসন নীতিকে পুরোপুরি বিকলাঙ্গ করে তুলেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরিকল্পিত ও ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ণের কারণে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট নগর জনসংখ্যার ৪৪ শতাংশ এখন রাজধানীতে বসবাস করে, পাশাপাশি প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার নতুন মানুষ শহরে ঢুকছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ভারসাম্যহীন চাপ শুধু আবাসন নয়, বহুমুখী সংকট তৈরি করছে। পরিতাপের বিষয়, অন্যান্য দেশের মতো আবাসনকে সরকার বিশেষ গুরুত্বের ক্ষেত্র হিসাবে না দেখে বিষয়টি বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছেড়ে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, নিম্ন-আয়ের মানুষ জীবনের খরচের হিসাব মেলাতে না পেরে বাধ্য হচ্ছে- বস্তি কিংবা ফুটপাতের ভাসমান জীবন বেছে নিতে। মনে রাখা দরকার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট উদ্বাস্তু স্রোতও এ সংকটকে দিন দিন আরও ঘনীভূত করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত