প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২১ অক্টোবর, ২০২৫
গত কয়েক দিনে দেশে বেশক’টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত শনিবার ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। সেই আগুনে বিদেশ থেকে আমদানি করা শত শত কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসব কি নিছক কোনো দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত নাশকতা-এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অন্য আর দশটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মতো বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এ অগ্নিকাণ্ডের খবর দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে দেরি হলে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা যেতে পারে। ঢাকার বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজসহ অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত জরুরি মনে করেন তিনি। শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ের আগুনের ঘটনাগুলো সন্দেহ তৈরি করছে। তারা মনে করেন, সংসদ নির্বাচন বানচালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশে নাশকতামূলক অগ্নিদুর্ঘটনা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সক্ষমতার অভাব রয়েছে। সেই ঘাটতি দূর করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুনের ঘটনা এটি প্রথম নয়, এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। সেই সময় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, সব যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কেন দেরি হচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।
অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে দেশের মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজ ক্রমাগত কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে শিল্পকারখানার মালিকরা অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন, এটাও এক প্রশ্ন। পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অনেক আলোচনা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
যেসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে, সে ব্যবস্থা দ্বারা আগুন কীভাবে নেভানো যাবে, সে ব্যাপারে কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার। বস্তুত, রাজধানী ঢাকা একটি অপরিকল্পিত জনবহুল শহর। প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সবাই সবকিছু ভুলে যায়।
বিমানবন্দর এমন একটি জায়গা, যেখানে নিরাপত্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ের হওয়ার কথা। অথচ সেই জায়গাতেই হঠাৎ করে লাগা আগুন নিয়ে দেশের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। বারবার অগ্নিকাণ্ড শুধু সম্পদ ও প্রাণহানিই ঘটায় না; এতে জনমনে এক ধরনের ভয়ও সৃষ্টি হয়। মানুষ জানতে চায়, তাদের জীবন ও সম্পদ কতটা নিরাপদ। তাই প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন হওয়া জরুরি। কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারও দায় চিহ্নিত হলে, সেই ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।